আসলে সত্যি কথা বলতে কি কিংবা ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে গেলে আসল কথাটা এরকম যে, হিমু++ বইটা লিখব এরকমটা ঠিক করেছি চার বছর বা তারও বেশি সময় ধরে।কিন্তু সিরিয়াসলি লিখব বা লিখতেই হবে, মানে এক প্যাড শাদা কাগজ সামনে নিয়ে বসে আছি, কিছু একটা লিখতে হবে -- এরকমটা ভাবতেই কেমন জানি হাই পায়। তার চেয়ে একটা তিন দিনের জামাতে গিয়ে মসজিদে গিয়ে বিস্তর ঘুমানো অনেক সহজ ব্যপার।ঘুম থেকে উঠেই বিস্তর খানা, তারপর যোহরের নামাজ, তারপর আবার ঘুম। বিকেল বেলায় হেলেদুলে রাস্তায় বেরোনো আর এলাকার মানুষজন দূর থেকেই সমঝে থাকবে এই বুঝি ধরে চার মাসের জামাতে পাঠিয়ে দিবে, মানে একদম হান্ড্রেড টুয়েন্টি ডেইজ। ভাবতেই রিটায়ার্ড বুড়োদেরও হার্টের টিক টিক একটু ধীর হয়ে যায়।
এরকম একটা বুড়ো অনেকটা আধেক ঢেঁলি গেলার মত চার মাসের জামাতে যাবে কিছুটা রাজী হয়ে ভয়ে ভয়ে তার ওয়াইফকে ফোন দিল।
" হ্যাঁলো, দিলরুবা, দিলরুবা, আমি না যাচ্ছি, মানে চার মাসের জামাতে, মানে তবলিগের চিল্লায়..."
হ্যাঁ,দিলরুবা,দিলরুবা... "
বুড়ো এত আপসেট হয়ে
গেল কেন বুঝা যাচ্ছে না, যেন এখনই তাকে ধরে চালান দেওয়া হচ্ছে।
এই ষাটের দশকের মত মাই ডিয়ার টাইপ ফোনালাপ এর সামনে আমীর সাহেবও
বেশ বিরক্ত মনে হচ্ছে।
আমীর সাহেব খুব স্মার্ট বুড়া। ত্রিশ বছর বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার ছিলেন টরোন্টো আর দুবাইতে।
আমীর সাহেব বললেন,
মিঃ রায়হান, এই বুড়োটা বেশ ভড়কে গেছে মনে হয়।
'জ্বী,আমীর সাব। '
আমীর সাহেব আমাকে এমনভাবে সম্বোধন করে কথা বলেন যেন এই বুঝি
মেলবোর্ন থেকে ফ্লাইটে করে মাত্র এয়ারপোর্ট থেকে এসে সরাসরি জামাতে জয়েন করেছি অথবা এই জামাত সেরেই বোধহয় আমি সিডনি বা নিদেনপক্ষে
কুয়ালালামপুরে যাচ্ছি। আমার বুদ্ধিবৃত্তির উপর তিনি বেশ ভরসা রাখেন আর জামাতে কম বয়সী ছেলেপুলেদের উতপাত বা কথা না শোনা কিভাবে
দমন করা যায় এ ব্যপারে আমীর সাহেব আমাকে প্রধান উজীর হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ব্যবহার করেন। আর মাঝে মাঝে আমাকে সরু গলায়
বলেন ,"ট্রাই টু ডু সামথিং গুড ফর দিস পুয়র নেশন"।
"মিঃ রায়হান, নেক্সট টাইম আমরা বনশ্রী এলে মোবাইল ফোন নেট যাতে এসব বোকা বুড়োদের
আশেপাশে অফ থাকে সেটা ব্রেইনে রাখবে। "
" জ্বী,আমীর সাব। এরপর থেকে জামাতে আসলে একটা ফ্রীকোয়েন্সী জ্যামার সাথে নিয়ে আসতে হবে।
একদম অটোমেটিক পেন্সিল ব্যটারী ভরা রিমোট কিন্ট্রোলড।"
" গুড আইডিয়া"।
লেখালেখির কথায় আবার আসা যাক। আমাদের গ্রামের বাড়ির দেয়ালে রাস্তার সাইডে মসজিদের হুজুর কতিপয় ছেলে ছোকড়াঁ নিয়ে এসেছিল
ইসলাম ভিত্তিক বিশেষ রাজনীতির ব্যনার দেয়াল লিখন করবে বলে। আমি বললাম, এখানে এই দেয়ালে ইসলাম বা এ জাতীয় শব্দ লেখলে অবমাননা হবে।
তিনি বললেন,কেন? আমি বললাম, এটা ভেতরের দিকে একটা টয়লেট। তিনি বললেন, আচ্ছা। আমি বললাম, এমন কি কোন শায়খের নাম দেওয়া
ঠিক হবে না,এতে অবমাননা হবে। তিনি বললেন,আচ্ছা ঠিক আছে। শেষ পর্যন্ত আমি নিচে দিয়ে সৌজন্যে আমার অনাগত জুস কোম্পানীর
বিজ্ঞাপণ লিখে দেওয়ার অনুরোধ করলাম। ইসলাম বা কোন শায়খের নাম ছাড়াই তারা বীতি ,নেতা এসব শব্দ দিয়ে একটা দেয়াল ব্যনার লিখে নিল । কিন্তু তারা ব্যস্ততার ভংগীতে
সায় দিলেও শেষে আমার বিজ্ঞাপণ এর জন্য কোন কিছু লিখল না।শেষ পর্যন্ত আমি নিজেই
ইটের খোয়া দিয়ে লিখলাম সেই ঐতিহাসিক বিজ্ঞাপণ ।
" সোহাগ ভাই জুস খাবেন
অন্য কোন জুস খাবেন না
সোহাগ ভাই জুস ভাল জুস
সোহাগ
ভাই গ্রুফ অফ কোমফানী"
বাহ, লিখতে দেরী, কিন্তু পিচ্চি মহলে সাড়া পড়তে দেরী হল না। এখন বিগত প্রায় সাড়ে তিন বিছর ধরে পিচ্চিরা
আমাকে দেখলেই আমার ভাই তোমার ভাই টাইপ শোরগোল করে উঠে,
"সোহাগ ভাই জুস খাব,সোহাগ ভাই জুস চাই। "
বোঝা গেল একটা কিছু ঘোষণা দিয়ে অলসতা করা ভাল না। এ কারণে আমি 'হিমু++ ' নামে একটা বই লিখতে যাচ্ছি এটা অনেক বছর কাউকে বলিনি। কারণ অলসতা করে দেরী করলে সবাই রাগ করে বা মাইন্ড করে।
কিন্তু আমি বিভিন্ন কারণে অত্যন্ত পেরেশান৷ আমাদের ধান ক্ষেত,কলা ক্ষেতে অপচক্ররা নানান সাবোটাজ করছে। তাই সেই পুরোনো দেয়াল লিখনের এক কোণে আলাদা কাগজ সেঁটে লিখলাম, "একজন নিভৃতচারী কবি সোহাগ ভাই, বিরক্ত করবেন না। keep silence"। আশ্চর্যের বিষয়, এবার আর কেউ এসে চাইল না কই দেখি আপনার একটা কবিতা পড়ি। বরং কে বা কারা কাগজটা ছিঁড়ে ফেলল। আমি তিনবার এরকম লিখে কাগজ সেঁটেছি আর তিনবারই কাগজ ছিঁড়ে ফেলল। পিচ্চিদের মধ্যেও কেমন থমথমে হাবভাব। বোঝা গেল, এই দুনিয়া আর সেই সেই দুনিয়া নাই (এই গানের সাবিনা ইয়াসমিনকে নিয়ে ২০০৭ সালের কেয়ারটেকার কেয়ার করার নামে কত কাহিনী করল। এই একবার স্ট্রেচারে করে সিংগাপুরে নিয়ে যায়,আবার ফেরত আনে, আবার নিয়ে যায় -- একেবারে বিটিভিতে লাইভ দিয়ে )। এই দিনেরে নিয়ে যাবে সেই দিনেরও কাছে এরকম প্রত্যয়ও মানুষের মাঝে আর নেই।
তারপরেও কোন কারণ ছাড়াই সব বদলে যেতে পারে। আসলে খুশি হওয়ার জন্য কোন কারণ দরকার হয় না। আপনার সিদ্বান্তটাই যথেষ্ট যে আপনি আনন্দিত হতে চান। বিশ্বাস না হলে দেখুন, চেষ্টা করুন। দেখবেন কোন কারণ ছাড়াই আপনি আনন্দিত অবস্থা উপলব্ধি করছেন। লম্বা করে দম নিন, কিছুটা ধরে রেখে ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। আবার দম নিন, গভীরভাবে। আবার ছাড়ুন। পরম করুণাময় এর সাজানো আকাশ, বিছানো জমিন, নিঃসীম প্রান্তর - এখান থেকে গ্রহণ করুন পুলকিত স্বচ্চছলতার প্রগাঢ়তা। আর আপ্লুত হঊন বিশেষ কৃতজ্ঞতায়।
হুমায়ুন আহমেদের স্ত্রী গুলতেকিন প্রথম সন্তান হওয়ার পর তার স্বামীকে বলল আযান দিতে। এটা ছিল নর্থ ডাকোটা স্ট্যাট ইউনিভার্সিটিতে কেমিস্ট্রিতে পি এইচ ডি পড়তে যাওয়া উপলক্ষ্যে সেখানেই আশেপাশের কোন একটা হসপিটালের ঘটনা। ভদ্র লেখক আমেরিকান নিয়ম অনুযায়ী অপারেশন রুমের ভেতরে তাঁর স্ত্রীর পাশে হাত ধরে পুরো সময়টাই পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য ছিলেন। এ ব্যপারে আমেরিকানদের যুক্তি হল সন্তানের মা সন্তান জন্ম হওয়ার সময় যত কষ্ট করে সন্তানের বাবাও সে সময় পাশে থেকে অন্তঃত এর মানসিক তাড়না বা পীড়ন এ কষ্ট পাওয়া উচিত। তো মানব জন্মের দীর্ঘ কষ্টকর ঘটনায় প্রায় হতভম্ব লেখক মশায় আযান দেওয়ার ফয়সালা শুনে দুই হাত এর আংগুল কানে দিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে আযান দেওয়া শুরু করলেন।
শোনা যায়, চাঁদে অবতরণ করেই নাকি নীল আর্মস্ট্রং আযান এর মত শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন, এরপর থেকে পৃথিবীতে এসে তিনি নাকি আর কারো সাথে কথাই বলেন না। ভীষণ ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে গেছেন হয়ত। অবশ্য নিন্দুকেরা বলে ওনাকে কারো সাথে কথা বলতে দেওয়া হয় না। যে জায়গায় দুরবর্তী রকেট থেকে ক্যাপসুলটা গিয়ে দুই আরোহীকে নিয়ে অবতরণ করেছিল সেটা নাকি ঠিক সেই মহান ঐতিহাসিক চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার বরাবর জায়গা।
তো হসপিটালের অপারেশন রুমের ভেতরে ভীষণ আযানের শব্দ শুনে আমেরিকান নার্স এর হাত থেকে ট্রে পড়ে গেল। ডাক্তারদের মধ্যে বয়স্ক মত কেউ একজন হয়ত কাত হয়ে পড়ে গেল কিনা কে জানে। ঘটনাটা মানবজাতির চাঁদে অবতরণ করার সম্ভবত আট বছর পরের কথা । তখনো পরিস্থিতি এতটা খারাপ না যে আমেরিকার জনমনে বা বিভিন্ন মুসলিম দেশের সরকার প্রশাসনের উপর আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের অস্বাভাবিক চাপ সবাইকে মুষরে রেখেছে। নতুবা ব্যপার অনেক জটিল হতে পারত।
কি রকম জটিল দেখেন, টেক্সাসে ২০১১-১২ সালের ঘটনা।স্কুলের এক গোবেচারা সাধাসিধে ছাত্র খুব ঢাউস সাইজের একটা ইলেক্ট্রিক ঘড়ি বানিয়ে তার শিক্ষিকা মহাশয়ের সামনে উপস্থাপন করল, ম্যাম,দেখেন এই যে আমি বানিয়েছি। ম্যাম নাকি এই প্রমান সাইজের বাক্স দেখে ভয়ে চিৎকার করতে করতে গিয়ে পুলিশে ফোন দিলেন , বুম, বুম, মানে বোম্ব, আই মিন বোম্ব , এটম,নিউক্লিয়াস ইত্যাদি ইত্যাদি।
ছেলেটা ছিল সুদানী পরিবার এর। মুসলিম আর কিছুটা ব্ল্যাক। ব্যস,কেল্লা ফতে। এই ছেলের বাবা এই অস্বাভাবিক দৃশ্যটা মোটেই সহ্য করতে পারল না যে তাঁর ছোট্ট ছেলের হাতে ফেডারেল পুলিশের হাত কড়া পড়েছে। রাগে দুঃখে ছেলেকে সে কাতারে পাঠিয়ে দিল। সেখানে কাতারের রাজপরিবারের বিশেষ অতিথি হিসেবে সে স্কুলের পড়াশুনা শেষ করল। শেষমেষ হোয়াইট হাউস থেকে বিশেষ সরি টাইপ চিঠি বা একটি ডিনারে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে এই ছেলেকে আমেরিকায় ফিরিয়ে আনা হয় ২০১৪ তে
এ সময় আরেক ক্যবলা ক্যারেকটার উদ্ভুদ হয় ব্রিটেইন থেকে, নাম হারিছ জে.। অনলাইন ভিডিও স্ট্রীমিং এ ইংরেজী "আসসালামুয়ালাইকুম" গানের মাধ্যমে। কলিমা তয়্যবা বা সালাম বা দ্বীন ধর্মের সরাসরি কোন বাক্য নিয়ে গদ্যবাদ্য বাজনা নিয়ে হুজুররা কেন জানি কিছু বলেন না । অথবা বিষয়টা হয়ত গুরুত্বের সাথে সামনে আসেনি ।
নিউইয়র্কে ঠিক টুইন টাওয়ারের ঘটনার ঐ দিন নিউইয়র্কের ওই জায়াগার আশেপাশে তবলিগের আটটা জামাত ফেডারেল পুলিশ অত্যন্ত প্রতিভার সাথে আবিষ্কার করল। তারমধ্যে বাংলাদেশ থেকে গিয়েছে এরকম জামাত নাকি দুইটা বা তিনটা। আসলে ব্যপার তেমন কিছুই না। মাথামোটা এক ড্রাইভার মাথামোটা পুলিশে ফোন দিয়েছে। ড্রাইভারটা তার ট্যাক্সী করে বাংলাদেশী এক জামাত নিয়ে ম্যানহাটান পেরিয়ে যাচ্ছিল। নিউইয়র্ক এর সকালের অফিস শুরুর আগের দিকের ট্রাফিক জ্যাম এড়ানোর জন্য ড্রাইভার নিজেই খুব তাড়াহুড়া দেখাচ্ছিল আর সবাইকে তাগাদা দিচ্ছিল। ভাল কথা। যত দ্রুত ট্রাফিক জ্যাম এড়িয়ে যাওয়া যায় ততই ভাল। কিন্তু ঐ টুইন টাওয়ারের কাছে এসে ড্রাইভার ভাবল এরা অচেনা গরীব দেশ থেকে এসেছে কি সব জামাত ফামাত করে, যাক একটু ঘুরিয়ে উঁচু টুইন টাওয়ারটা দেখিয়ে নিয়ে যাই। ড্রাইভার গলা খাঁকারী দিয়ে বলল,তোমরা যদি চাও খুব উঁচু বড় বড় টুইন টাওয়ার টা এক নজর দেখে যাবে তো আমি সেদিক দিয়ে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে যেতে পারি। একথা শুনে জামাতের আমীর সাহেব বেশ বিরক্ত হয়ে গেলেন।
আসলেই নিউইয়র্ক এর অফিস টাইমের জ্যাম ঢাকার থেকে কম দরের না। তদুপরি জামাতের প্রায় কম বেশি সবাই পি এইচ ডি বা ডাক্তারী পড়াশুনার কারণে অনেক বিদেশ করেছেন। অন্তত দুজন আছেন যারা হয়ত এই নিউইয়র্ক এই পড়াশুনা করেছিলেন। এখন এই নতুন মাইগ্র্যান্ট ড্রাইভারের অতি আদিখ্যেতা শুনবার টাইম কারো নাই। ট্যাক্সি যত দ্রুত ম্যনহাটান পেরিয়ে যাবে ততই ভাল। কিন্তু আমীর সাহেবের নিষেধ সত্ত্বেও ড্রাইভার গাড়ি ঘুরিয়ে দিল। আর নিজের মনে বিড় বিড় করতে লাগল গরীব দেশের বুড়ো লোক এরা আহা।
(ব্যটা, বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে সবচে সুখি দেশ, ধনীও বটে। )
আহা, ভাল ভিডিও মোবাইল সেট কোন দিন হয়ত এরা দেখেনি
(ব্যাটা,তোদের সব মোবাইল চিপ আমাদেরই ডিজাইন করা)
আহা,এরা আমাদের রকেট, মিসাইল এগুলোতো চিন্তাই করতে পারে না
( তোদের সব বোয়িং,স্কাড,রকেট সব
আমাদের বিজ্ঞানীরাই বানায়,
গর্দভ কোথাকার , এমনকি তোদের সব চেয়ে বড় বিল্ডিংটাও)
বিড়বিড় করতে করতে ড্রাইভার ঠিকই ট্যাক্সি নিউইয়র্ক টুইন টাওয়ারের পাশ ঘেঁষে নিয়ে যাচ্ছিল। আর অতি উৎ সাহী কবি যেমন তার কবিতা দেখায়,প্রডিউসার তার প্রোযোজনা উপস্থাপন করে তেমনি ড্রাইভারটাও উচ্ছাস করে যেন মঞ্চের যবনিকা মেলে ধরল, লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান, দ্য টুইন টাওয়ার।
আমীর সাব মনে হয় চিটাগং ভার্সিটির কোন প্রফেসর ছিলেন। তিনি নাকি বিরক্তিতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলেন আর রাগ করলে আরবরা যেমন বলে তোমার উপর হেদায়াত আসুক তেমনি আমীর সাহেব তবলিগের ভাষায় ইমাণী কথা বললেন, স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালার শক্তির কাছে এই মাখলুক(সৃষ্ট বস্তু) কিছু ই না। আর ঠিক তখনই কি হল, টুইন টাওয়ার টা ভেংগে পড়তে লাগল। কি আজীব ব্যপার, কি ভয়ংকর ব্যপার। সমস্ত আমেরিকা তখন পরিস্থিতির আকস্মিকতায় থরথর করছিল। আর ড্রাইভারের অবস্থা তো বলাই বাহুল্য। আতংকে ট্যাক্সি টা এক পাশে সাউড করে সবাইকে রেখে সে বেরিয়ে গিয়ে ফোন বুথে গিয়ে ফোন ধরল। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কথা।
ফ্লোরিডা থেকে দুটো বিমান ঘুরিয়ে স্তন্ত্রাসীরা নাকি টুইন টাওয়ারে আঘাত হেনেছে। তৃতীয় আরেকটি বিমান নাকি পেন্টাগনের দিকে যাচ্ছিল। সেটা মাঝপথে বিদ্ধস্ত হয়। তো ড্রাইভার ফেডারেল পুলিশকে ইনফর্ম করল যে তার ট্যাক্সীতে বসে আছে এক গ্রুপ নুসলিম। আর তাদের লিডার কি যেন রিমোট টিপ দিয়েছে আর টাওয়ার টা ভেংগে পড়ে গেছে। ফোন পাওয়া মাত্র ফেডারেল পুলিশের মধ্যে হৈ চৈ পড়ে গেল। সেখান থেকে ফোন চলে গেল এফ বি আই তে, সেখান থেকে একদম পেন্টাগন হেডকোয়ার্টারে। সাথে সাথে এরকম তবলিগের আটটা জামাত বিভিন্ন তথ্যমতে ডিটেক্ট করে সবাইকে পাকরাও করে এক সাথে জড়ো করা হল।
'তোমার মাথায় এটা কি
'
এটাকে,টুপি বলে
'তূমি গায়ে যেটা পড়েছ এটাকে কি বলে
'
এটাকে জুব্বা বা আলখাল্লা বলে।
"এটা এত ঢিলাঢালা কেন?"
এটা সুন্নত
"
সুন্নত কাকে বলে "
এরকম বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদের পর সবার পাসপোর্ট চেক করার জন্য নেওয়া হল। কয়েক ঘন্টা চলে গেছে। ইনভেস্টিগেশনে একটু বিরতি
দেওয়া হল। প্রত্যেক জামাতের আমীর সাহেব যার যার সাথীদেরকে ঈমাণী মোজাক্বারা ( আলোচনা) করতে বললেন।
এসময় একজন
আমীর সাহেব দু হাত তোলে অল্প একটু দোয়া করলেন। আসলে ইনভেস্টিগেশনে বিরতি দেওয়া হলেও কে কি করে তা মনিটর করা হচ্ছিল
অবশ্যই।
কিছুক্ষণ পর আবার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হল।
ছোট ছোট প্রশ্ন করা হচ্ছে, এটা কি ওটা কি । ঘন্টা দুই চলে যেতে লাগল।
অধৈর্য হয়ে একজন আমীর সাহেব পকেট থেকে নেসওয়াক বের করে দাঁত এ আলতো মেসওয়াক করতে লাগলেন।
মিশন ইমপসিবলে
অনেক কিছুই অন্যরকম থাকতে পারে একজন গোয়েন্দা এজেন্টের কাছে । যেমন অল্প একটু টুথ পেস্ট ফিকে মারলে বিস্ফোরণ
হতে পারে।
'এই এই দেখি তো এটা কি'।
'এটা মেসওয়াক'
'এটা দিয়ে কি কর'
এটা দিয়ে দাঁত মাজা হয়
এটা কি দিয়ে তৈরী
এটা গাছের ডালা দিয়ে বানানো হয়।
'
দেখি দেখি তো'
খুব সাবধানে মেসওয়াক টা হাতে নিয়ে বর্ষীয়ান এক গোয়ান্দা চেক করে দেখল, হাঁ,এটা গাছের ডালা বটে।
বটে, এই লোক গুলো আসলে আগে অনেক স্মার্ট ছিল,লেখাপড়ার ব্যাকগ্রাউন্ড বেশ ভালই দেখা গেল ।
তবে হ্যাঁ, এখন এরা বুড়ো হয়ে গেছে। ওদের দেশে তো আর বুড়োদের জন্য ওল্ড হোম নাই। তাই এরা দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় আপনমনে।
বর্ষীয়ান গোয়েন্দা মশাই ফিক করে হেসে দিল।
আমি কি একটি মেসওয়াক নিতে পারি ? আই মিন এ স্যাম্পল ফর ইনভেস্টিগেশন।
শ্যিয়ুর, ওয়ান ফর উ এন্ড ওয়ান ফর ইনভেস্টিগেশন।
এই ইনভেস্টিগেশন টীমের ইনচার্জ ছিল একজন মহিলা। এবার তিনি কাছে এসে বললেন,জেন্টলম্যান,তোমরা চাইলে
সব প্যাক আপ করে
তোমাদের নির্ধারিত ট্যুরে চলে যেতে পার। সব কিছুর জন্য আমরা দুঃখিত।
সত্যি, ওরা বেশ দুঃখিত।
মহিলা ইনচার্জ ঐ আমীর সাহেবকে জিজ্ঞেস করল,
তুমি দু হাত তুলে কি বলেছিলে বিড় বিড় করে।
'আমি আমার রবের কাছে দোয়া করেছিলাম, অনেক সময় চলে যাচ্ছিল বলে '।
' ও আচ্ছা,তোমার রবের কাছে আমার জন্য একটু দোয়া কর '।
সব ওকে, সবাই প্যাক আপ করে চলে যাচ্ছে।
এসময় গোয়েন্দারা সরি সরি বলে খুব দুঃখ প্রকাশ করছিল।
কিন্তু একজন আমীর সাব বলল,
না, না,ইটস ওকে,হয়ত আমাদের
আমলে কোন কমতি হয়েছিল। তাই এত পেরেশানী হয়েছে।
আরে বাব্বা,এটা কেমন কথা, তোমাদের ই কোন ব্যপার আছে যে জন্য নাকি এত সময় প্রবলেম গেছে। স্টপ,স্টপ।
আবার গোয়েন্দাদের মধ্যে ফিস ফিস পরামর্শ চলতে লাগল।
মহিলা ইনচার্জ ব্যপার বুঝে সিদ্ধান্ত দিলেন যে, ঐ জামাতের আমীর সাহেব
তার দুই জন সাথী নিয়ে তিন দিন পরে তাদের হেডকোয়ার্টারে এসে তার এই স্পেশাল ফিলোসফি টা গুছিয়ে উপস্থাপনা করতে হবে।
তিব দিন পরে তাই হল। স্পেশাল ফেডারেল এস্কর্টে ঐ আমীর সাব কে তার দুজন সাথী সমেত হ্বফকোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়া হল আর
সেখানে তিনি বয়ান রাখলেন। বিশেষতঃ বাবা মা'র কথা বললেন।
সন্তান জন্মের সময় মায়ের যে ত্যাগ, সন্তানের জন্য সারা জীবন বাবার
যে আকুতি, আর বান্দার প্রতি রবের দয়াময়তা -- এগুলো বুঝিয়ে বললেন।
সেখানে কয়েকজন কেঁদে উঠল, হায়,আজ সাত বছর হতে চলল আমি আমার মাকে ফোন দিই না, অন্তত মাদারস ডেতে।
দু একজন অন্তরে বিশ্বাস বা ঈমাণ ধারণ করল।
এই ঘটনা আমি প্রথম শুনি মেলবোর্নে, ২০০৩ সালের শেষের দিকে, ফকনার
কেন্দ্রীয় মার্কাজ মসজিদ থেকে তিন দিনের
জামাতে গিয়ে।
( এই মেলবোর্ন নামে ফ্লোরিডাতেও একটা শহর আছে। কেন জানি খুব খরুচে একটা প্রাইভেট ইনস্টিটিউট, ফ্লোরিডা ইনস্টিটিউট অফ
টেকনোলিজী,মেলবোর্ন আমার পছন্দ হয়েছিল। আর সেই সাথে ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ফ্লোরিডা থেকে ও ভর্তির কাগজ পত্র ব্যবস্থা
করেছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশে আমি যে প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়তাম সেখানে ঠিক ১২ তারিখ সেপ্টেম্বর মাসে ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে গিয়ে
রেজিস্ট্রার স্যারের রুমে যখন ঢুকলাম,আমি তখনো আগের দিনের টুইন টাওয়ারের ঘটনা জানি না। আব্বা লিবিয়াতে একটা তেলের কোম্পানীতে
জব করতেন আর তিন মাসে একবার ছুটিতে আসতেন, হঠাৎ স্ট্রোক করেছেন। রেজিস্ট্রার স্যার সব সাইন করে কি যেন প্রিন্ট দিলেন।
তখন ও পুরনো সি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজে সফটওয়্যার চলত। সফটওয়্যার ডাটাবেজ থেকে আমার গ্রেডিং প্রিন্টারে যান্ত্রিক আওয়াজের
সাথে প্রিন্ট হচ্ছিল। হঠাৎ রুমের কোর্নারে টিভির মনিটরে নজর পড়ল। অল্প আওয়াজে টিভি তে সেই বিমান ধাক্কায় টুইন টাওয়ার পড়ে
যাচ্ছে -- এই নিউজ বার বার দেখানো হচ্ছিল। আমি পরিস্থিতির অংক কষে ফেললাম। বার বার স্যারের দিকে তাকাচ্ছিলাম,
কম বয়সে ওনি সুইডিশ এটমিক রিসার্চ সেন্টারের কোন একটা অংশের ডাইরেক্টর ছিলেন। নাকি আজকের এই শুভ সকালে
এই এটমিক বুড়োর সামনেই আসাটা ঠিক হয়নি। )
নিউইয়র্ক এ তবলিগ জামাতের ঐ
ঘটনা শুনবার পর থেকেই মহিলা পুলিশ বা মহিলা গোয়েন্দা দেখলে আমি ভক্তি করি। একে তো মাতৃ জাতি,
তার উপর কি নিবিড় স্থির ধী।
অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে আমি জীবনে কোনদিন বিমানে উঠিনি। আব্বার সাথে হয়ত লিবিয়ায় গিয়ে ত্রিপুলীতে বেড়ানো যেত। কিন্তু কখনো আসলে ওভাবে যাওয়া হয়ে উঠেনি। কারণ স্কুল ফাইনালে প্রায় আধা কোটি বংগ সন্তান এর মধ্যে আমাকে ফার্স্ট স্ট্যান্ড করতে হবে এরকম একটা তাড়নায় আমি সবসময় তাড়িত থাকতাম । আব্বা ঘুর পথে সুইডেন, ফ্রান্স,দুবাই, রাশিয়া,মাল্টা -- অনেক দেশ ঘুরে আসতেন। আব্বার সাথে গেলে হয়ত অনেক দেশ এ পদার্পণ হয়ে যেত। কিন্তু বাংলাদেশেও শুধু চট্টগ্রাম জেলা ছাড়া আমি কোন জেলায় যাই নি। চুয়েটে একবার ম্যাকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হয়ে কিছুদিন ক্লাস করে চলে এসেছিলাম। বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা ভাল হয়নি হয়ত এজন্য যে সে সময়, একটা সান্ধ্য দৈনিক পত্রিকার প্রজেক্ট মাথায় চেপে বসেছিল। এর ছয় মাস পরেই 'মানব জমিন ' পত্রিকা চালু হয়।
এমনকি আমি বাসায় আমার রুম থেকে খুব দরকার ছাড়া বেরোতাম না। সামনের বারান্দাতেও কদাচিত দাঁড়াতাম। আর আমার জানাল গুলোর
পর্দা ক্লিপ দিয়ে সেঁটে রাখতাম যাতে ফ্যানের বাতাসে সরে না যায়।
পাশের বিল্ডিং এর মিল্লাত কোম্পানী ওয়ালার মেয়েরা
ছাদে উঠে হাঁটাহাঁটি করে। একটা মেয়ে আছে ছয় ফুট লম্বা, তাকে দেখা মাত্র ভয় লাগে।
এই মিল্লাত কোম্পানীর মাত্র এক
ছেলে আর বাকি সব মেয়ে।
আমাদের বিল্ডিং এর বাড়িওয়ালা ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকে। তার শুধু দুই মেয়ে। বাড়ি ওয়ালার ছোট ভাই তিন
তলায় থাকে তার পিচ্চি পিচ্চি তিনটা
মেয়ে। চারতলায় এরাও সব মেয়ে।
আমাদের পাশের সি ব্লকে আম্মার মামার বাড়ি। সেখানেও শুধু
খালাদের সাথেই দেখা হত, এরা সবাই মেয়ে। এমনকি ঢাকা ভার্সিটিতে পলিটিকাল অনার্স পড়ে এক খালার বই এর তাক থেকে নিয়ে যে বইগুলো পড়ি,
সেগুলো ও শহীদ জননী টাইপ বই। আশেপাশে আমার কোন বব্ধু বান্ধব নাই। আর আমিও কারো সাথে মিশি না।
তবে হেঁটে হেঁটে
ভিকারুন নিসা স্কুল পেরিয়ে বেইলী রোডে মন্ত্রী পাড়ায় এ বাংলো ও বাংলো একা একা পায়চারী করা আমার একটা অভ্যাস ছিল।
এখানে বিশাল লন গুলোতে মাঝে মাঝে দু একটা বিড়াল কাছে এসে মিউ মিউ করত, আমার ধারণা এগুলোও মেয়ে বেড়াল ছিল।
নিউইয়র্ক এ টুইন টাওয়ারের ঘটনার সময় আশেপাশের বিভিন্ন তবলিগ জামাত এর কিছুটা পেরেশান হওয়ার মত আরো কিছু ঘটনা প্রায় একই সময় বিভিন্ন স্টেটে ঘটেছে। তারমধ্যে পরের দিন আটলান্টা স্টেটের জেন্দ্রীয় মসজিদের ঘটনাটা খুবই চিত্তাকর্ষক। বাংলাদেশের ঢাকা শহরের একজন শুরা ও মুফতি সাহেব ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার কোন এক শহরে। তবলিগে জড়িত হওয়ার আগে ওনার পড়াশুনা ছিল ফুড ইঞ্জিনীয়ারিং এ। ওনি একজন ফুড ইঞ্জিনীয়ার হিসেবে অস্ট্রেলিয়াতে একটা বেসরকারী প্রোজেক্টে সাময়িক কালের জন্যে ট্যুরে ছিলেন। প্রোজেক্টের কাজ কর্ম শেষ করবার আগে ওনি বাংলাদেশে ফেরবার আগে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আরবদের জন্য একটা ফুড রিপোর্ট তৈরী করে পাঠানোর জন্য মনস্থির করলেন।
আরবদের অনেক রকম বিলাসিতার মত এটাও একটা আজিব ব্যপার যে তাদের দুম্বা গুলো শুধু জবাই দেওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হয়। এখান থেকে দুম্বা একদম প্রোসেস হয়ে ফ্রেশ মিট হিসেবে আবার আরবে শিপমেন্ট করা হয়। ব্যপারটা ওনার কাছে বেশ ঘোলাটে লাগল। ওনি দুম্বা জবাইয়ের শরিয়া বিহীণ বেহালাল পদ্ধতির ছবি তুলে রিপোর্ট করে একদন সৌদি পাঠিয়ে দিলেন। সৌদি সরকার সব শিপমেন্ট ক্যান্সেল করে দিল। এই দুম্বা প্রসেসের টেন্ডারটা অস্ট্রেলিয়াতে শিয়া ব্যবসায়ীদের হাতে ছিল। তারা শিপমেন্ট ক্যান্সেল হয়ে যাওয়াতে কে এই রিপোর্টার খুঁজতে শুরু করে দিল। অবস্থা বেগতিক দেখে ফুড ইঞ্জিনিয়ার শুরা মশাই বাংলাদেশের বদলে আমেরিকায় চলে গেলেন আটলান্টা স্ট্যাটে।
আমেরিকায় এসে দেখেন পরিস্থিতি এখানে অস্ট্রেলিয়ার চেয়েও খারাপ। পরপর দুটো বিমান আঘাত করে টুইন টাওয়ার ভেংগে ফেলেছে। আমীর সাহেব একা। তিনি কোন জামাতে আসেন নি। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে যোহরের নামাজ পড়ার জন্য তিনি সোজা সেন্ট্রাল মসজিদের উদ্দেশ্যে ট্যাক্সিতে চড়লেন। ট্যাক্সি থেকে নেমে মসজিদের সিঁড়িতে উঠা মাত্রই বেশ কয়েকটা টিভি ক্যামেরা তাঁর চতুর্দিকে ঘেরাও দিল। এরা আমীর সাহেবের সাক্ষাৎ নিবে। সব কয়েকটা চ্যানেলের ক্যামেরা ছিল একদম লাইভ ব্রডকাস্টে। পুরো স্ট্যাটের অনেকেই এসব চ্যানেল অন করে বসে ছিল মুসলমানদের কাছ থেকে পরিস্থিতির উপর কিছু বক্তব্য শুনবে বলে।
কিন্তু মসজিদের ইমাম সাহেব নাকি চরম মানসিক চাপে অনেক আগেই চম্পট দিয়েছেন। আর সিনিয়র অনেক মুসল্লীও হয়ত লাইভে এত ক্যামেরা দেখে কাছে ভিড়ছিল না। এখন আমীর সাহেবকে লম্বা জুব্বা ও পাগড়ী পরিহিত পেয়ে ক্যামেরা ওয়ালারা খুব আশ্বস্ত হল। হি ইস দ্যা ম্যান, হি উইল গিভ দ্যা স্পীচ। আমীর সাব প্রথমে কিছুই বুঝতে পারছিলেন না এত চ্যানেল ক্যামেরা তাঁকে কেন সাক্ষাৎকার দিতে বলছে। পরে যখন জানলেন ইমাম সাব বা দ্বায়িত্ব শীল অন্য কাউকে না পাওয়া যাওয়াতে পুরো আটলান্টাবাসী আমেরিকানরা তাঁর কাছ থেকেই কিছু শুনতে চাচ্ছে।
আমীর সাব তথা ঢাকার শুরা মশাই ফুড ইঞ্জিনীয়ার সাহেব শান্ত ভাবে কথা বলা শুরু করলেন ক্যামেরার সামনে । এটা ছিল একটা চরম মানসিক চাপের সময় আর সমস্ত আমেরিকা বাসী পরিস্থিতিতে দিশাহারা হয়ে থর থর করে কাঁপছিল যেহেতু পরিস্থিতি কতটা খারাপ এ সম্পর্কে তেমন না জেনেই শুরা মশাই এই সেন্ট্রাল মস্কে এসে পড়েছেন ,সেহেতু ওনার পক্ষে ধীরস্থিরে কথা বলা সম্ভব হয়েছিল। আর আটলান্টাবাসীর এই বিষয়টাই দরকার ছিল। আমির সাব ইসলামের কিছু বিষয় তুলে ধরলেন । সাধারণ পর্যায়ে সামাজিক সহাণুভুতি ও সহিষ্ণৃতার ব্যপারে ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরলেন । আটলান্টাবাসী খুব আশ্বস্ত হল। এ সময় যোহরের নামাজ পড়ার জন্য আমীর সাব বিরতি নিলেন ও বললেন, নামাজের পড়ে তিনি মসজিদে আরো কিছু সময় অবস্থান করবেন । আগ্রহী কেউ কেউ চাইলে সরাসরি এখানে এসে তার সাথে কথা বলতে পারবে । সত্য ,সত্যি বেশ কয়েকজন এসে দেখা করল ,তাদের মধ্যে কয়েকজন বিজ্ঞানীও ছিলেন । দু একজন ঈমাণ বা বিশ্বাস অন্তরে ধারণ করলেন ।