A great social place
coming soon ...
জীবন উদ্দীপনী বিশেষ অন্তর্গত প্রেরণা/উহ্য আনন্দময় তাড়না যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাথারণ আটপৌরে কাজ সমাধা করতে সাহায্য করে - তা একেক জনের জীবনে একেক রকম । কেউ তার সন্তানের জন্য,কেউ তার বাবা মায়ের জন্য,কেউবা একটু শিক্ষীত হওয়ার জন্য- নানান জনের বেচেঁ থাকার নানান আনন্দ।
ঘটনার গূড় রহস্য সমাধানের জন্য একজন বর্ষীয়ান তাত্বিক গোয়েন্দা যেমন একটি বিশেষ সূত্র ধরে ধৈর্য্যের সাথে ক্লান্তিকর বিশ্লেষণের পথে এগিয়ে যেতে থাকে আর যতই তার বিশ্লেষণের বিশেষ সূত্র বাস্তবতার সাথে মিলতে থাকে ততই এক অব্যক্ত আনন্দের শিখা তার চেহারায় দমক দিতে থাকে,তেমনি প্রত্যেকের জীবনে বেচেঁ থাকার এক অব্যক্ত আনন্দ শিখা কাজ করে।
কিন্তু সভ্যতা সন্জীবনী যে মহান শক্তি যা মানুষের অন্তরের গভীরতম স্তর থেকে উদগত হয় যেই শক্তির বিকিরণে সমস্ত বিশ্ব সভ্যতা উপকৃত হয়,তা অবশ্য অন্তরের উপর সুদীর্ঘ সময়ধরে চরমতম আবেগের জটিলতম কষাঘাত,কঠোরতম পীড়ন যাতনা প্রেষণা থেকে আসে ।
'খাতা' নামক ছোট গল্পে একেবারে কমবয়সী সবেমাত্র বিয়ে হওয়া গৃহবধু সারাদিনের কাজ শেষে তার বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে আসা খাতা নিয়ে একাকী বসে থাকে -- এটা তার বেচেঁ থাকার উদ্দীপনী আনন্দ শিখা। কিন্তু শ্বশুর বাড়ির বুড়ো মহিলারা যখন তার খাতাটা কেড়ে নিল,আস্তে আস্তে সে শুকাতে লাগল,একসময় মরে গেল।
অন্যদিকে ,সুলতানী আমলের শাসকগোষ্ঠীর মদদপুষ্ট মুনাফাপ্রাপ্ত পিয়ারী থাক গোত্রের মঁসিয়ে দ্বারকানাথ এর বংশপরম্পরা ধারায় জমিদার রবীন্দ্রনাথের অল্প বয়সের কচি মনে বড় ভাইয়ের স্ত্রীর আত্নহত্যার ঘটনায়(গোয়েন্দা দৃষ্টিকোণ থেকে এটাকে অনেকে ) মানব হত্যা বলে থাকেন যেমনটি ডায়ানার বেলায় বলা হয়ে থাকে,অবশ্য পিয়ারী থাক গোত্রের বিশেষ মেজাজ হলো বংশশুদ্ধি বজায় রাখা, যা বিভিন্ন রীতি আচারের কারণে অন্যরা বা অন্য গোত্রগুলো হয়ত বজায় রাখতে দায়বদ্ধ নয়।
এজন্য এই জমিদার বাড়ির অধিকাংশ বিয়ে পাত্রের অমতে একদম নন ক্যারিশমেটিক সাধারণ খুব কাছের মেয়ের সাথে দেওয়া হতো অবশ্য বুড়ো বয়সে বিয়ে আলাদা বিষয়।
এই শুদ্ধি মেজাজ থেকে রবীন্দ্রনাথ ঢাকার ব্রাম্ম সমাজের প্রতি বেশ একাত্নতা পোষণ করত ) চরমতম কষ্টের তীব্র কষাঘাতে যে শক্তি উৎসারিত হলো তা সাধারণ ব্যক্তিসত্তার গন্ডি পেরিয়ে সভ্যতা সন্জীবনীর পর্যায়ে উত্তোরিত হলো ।
কষ্টে কষ্টে বেচারা অবুঝ কচি বুকটা ঝাঁজরা হয়ে গিয়েছিল। 'ছবি তুমি শুধুই ছবি' কবিতাটিতে এমন এক অব্যক্ত আকুতি প্রচ্ছন্ন যা প্রশ্নাতীত। আহ্,এত বড় নীহারিকা,গ্যালাক্সি- বিশ্ব চরাচরে বিশালতার মাঝে তুমি কি শুধুই নীরব একটা ছবি- আহ্ কি কষ্ট ,কোনভাবে কি এই ছবি অল্প একটু বাস্তবতা নিয়ে হেসে উঠতে পারেনা ? কচি কিশোর চেয়েই থাকে,চেয়েই থাকে । আর তার অন্তরে এমন এক আবেগ সঞ্চারিত হতে থাকে যার তীব্র কষাঘাতে উৎসারিত হতে সেই মহান সভ্যতা সন্ঞ্জীবনী শক্তি যার বিচ্ছুরিত আভায় উদ্ভাসিত হয় অন্ধকার সমাজের জীর্ণ ঘুপসি।
ঠিক তেমনি আমার নানা তাঁর প্রথম স্ত্রীকে এমন ভালবেসেছিলেন,আর নানী নানাকে ছেড়ে চলে যাওয়াতে নানা এমন কষ্ট পেয়েছিলেন যে বলার বাইরে। নানা নানীকে নিজের টাকায় ডিগ্রী পর্যন্ত পড়িয়েছিলেন,এমনকি নিজের হাতে নানীর কাপড় ধুয়ে দিতেন। কিন্তু লেখাপড়া শিখে বিশেষ হাইফাই হয়ে নানী চলে গেলেন জিন্না আমলের এক সচিবের কাছে । আহ্, এত কষ্ট কেন ভালবাসায়,কেন? কষ্টে কষ্টে নানা আরও দুটো বিয়ে করেছিলেন। একটা আমার নিজ নানীকে.আরেক ঘটকগিরি করতে গিয়ে, বিয়ের দিনে ত্যাদড় ভাগ্নে পাত্র লাপাত্তা,শেষে বয়স্ক লোকেদের চাপে ঘটক মামাকে বিয়ে করতে মূদূ হেসে মৌন সম্মতি দিতে হলো । অবশ্য ঘটকগিরি আর বিবাহ করা দুয়োটাই উত্তম সমাজ সেবা । এ ব্যপারে দুষ্ট লোকেরা কি বলে তাতে কিছু যায় আসে না।
কিন্তু হাইফাই নানীর চলে যাওয়ার পর থেকে নানার অবচেতন মনে কষ্টের এমন এক লু হাওয়া হামেশাই বয়ে যেত যে নানা প্রায়শঃ তার আকুতি প্রকাশ করে নিষ্কলুষ বার্তাবাহক পাঠাতেন। নানীর ধারী ধারী ছেলেরা তেড়ে আসত মারতে । নানী বুঝিয়ে সুঝিয়ে বার্তাবাহককে ফেরত পাঠাতেন।
ঢাকায় বেড়াতে এসে কাজী নজরুল এক গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলে একটি অস্ফুট মসৃণ আলোক রশ্মি দেখতে পেলেন। নজরুল সাহেব আনমনে ঐ আলোক ধারাকে অনুসরণ করতে গিয়ে বেরিয়ে রাস্তা পার হয়ে আরও এগিয়ে দেখলেন আলোটি একটা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ -সেখানে ঘুমিয়ে আছে সদ্য বিলাত ফেরত ক্যামব্রীজ থেকে অংকে পিএইচডি করা ফজিলতুন্নেসা। আহ্,রাজকন্যে তোমার ঘুম ভাংলেই সকাল হলেই বিবাহের প্রস্তাব নিবেদন করব। যতই থাকুক না তোমার ছলাকলা ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল মিঃ গুপ্ত না কি যেন নাম তার সাথে,ওকে এভয়েডের অভিমানে একদম আলুফালু করে দিব। আমরা হব মহান জুটি,চারিদিকে ব্রাভো ব্রাভো পরে যাবে।
কিন্তু মশিয়ে কবি নজরুল এলাকার ছেলেদের হাতে পিটুনি খেয়ে কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করেন(সূত্রঃ কাজী নজরুলের উপর ডঃ রফিকুল ইসলামের পিএইচ ডি থিসীস )
সে যাই হোক,আমার নানা চতূর্থ আরেকটি বিবাহ করার জন্য প্রায় মনস্থির করেছিলেন -কলেজে যাওয়া আসা করে এচজন মহিলা টিচার এর ব্যপারে মৃদু অভিসন্ধি ও নাকি ভক্ত মহলে প্রকাশ করেছিলেন ।
কিন্তু ততদিনে আমার নিজ নানীর সংসারে অনেক নাতী পৃথিবীতে তশরিফ রাখায় বা চলে আসায় বিষয়টা আর বেশী দূর এগুতে পারেনি । তবে বড় হয়ে ৩ চিল্লা (তবলিগে দ্বীনের রাস্তায় করার পর ) আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, নাতী হিসাবে আমি অবশ্যই নানাকে চতূর্থ বিবাহ করতে সহযোগিতা করতাম। অনেক গবেষণার পর আমি বুঝতে পারলাম নানার প্রথম নানীর ব্যপারে ভালবাসাটা ছিল একান্তই শিক্ষা সংক্রান্ত। অর্থাৎ এশ্কের জোশটা ছিল শিক্ষা আর প্রগতির দিকে। শিক্ষা একজন নারীকে পরিচ্ছন্ন করে, কাপড় পোশাক পরিপাটি করে পরিধান করে,সাধারণ আটপৌরে গ্রাম্য মহিলাদের মতো অল্প বয়সে লেদভেদ হয়ে যায় না,কথা বলে আকর্ষণীয় ভঙ্গীতে মার্জিত কন্ঠে শুদ্ধ ভাষায়। । ইত্যাদি ইত্যাদি । নাতি হিসেবে আমি নাকি অনেক বেশি পাকনা আর আমার মত কড়া হুজুর নাকি অতীতেও ছিলনা -- এটা আমার নিজ নানীর মন্তব্য । তিনি অবশ্য আমার মেজ ভগ্নি কে বেশি দিল দিতেন ।
মোদ্দা কথা,শিক্ষা একটা জাতির মানব সম্পদের মান উন্নয়ন করে যার প্রভাব পরবর্তী প্রজন্মের উপর হয় আরও ব্যপক ও সুদূর প্রসারী। তো শিক্ষা সংক্রান্ত এই ব্যপক এশ্ক,ভালবাসা,আবেগের মর্মযাতনা প্রসূত সভ্যতা সন্ঞ্জীবনী যে শক্তি সে সংক্রান্ত খেলাফতটা নানা মনে হয় আমার নিজ আম্মা হূযুরের দিকে ধাবিত করেছেন। আম্মাকে তিনি সিদ্বেশ্বরী স্কুল ও কলেজে পড়িয়েছেন । আম্মা হুযুরের বড়মামা ছিলেন ঐ ইস্কুলের হেড মৌলভী । নানা টাকা পয়সা দিয়ে মামাদেরকে ঢাকায় ঘর দুয়ার বানাতে দ্রুত সহায়তা করলেন । বিরাট এলাহী ব্যপার বৈকি ।
অবশ্য হজ্জ্বে যাওয়ার আগে নানা আমার আব্বার সাথে আম্মা হুযুরের বিবাহ দিয়ে যান । আব্বা এমন মেধাবী ছিলেন যে একটা পূষ্ঠা একবার দেখলেই মুখস্ত বলতে পারতেন । আম্মা হুযূরের পড়াটা ডিগ্রী পর্যন্ত পৌঁছেছিল, কিন্তু আমার বড় বোনের জন্ম হওয়ায় ডিগ্রী পরীক্ষা আর দিতে পারেননি ।
পরবর্তী জেনারেশনের তোড়জোড় হলো আমাকে নিয়ে । তিনকন্যার পর ,একমাত্র পুত্র সন্তান । আমার জন্মের আগের রাতে আম্মা হূযুর নাকি স্বপ্নে হাতে চাঁদ পেয়েছেন । স্কুলের পরীক্ষা গুলোতে অসাধারণ সব রেজাল্ট,চারদিকে হৈচৈ পড়ে গেল । কি এক এলাহী ব্যপার । আমি নাকি সার্খ্যাৎ বোর্ডে ফার্স্ট স্ট্যান্ড করব । সকাল বেলায় মঁসিয়ে খালারা চোখ কচলাতে কচলাতে বাবা মায়ের সাথে আমার ছবি পত্রিকায় দেখে ভীষণ আহ্লাদিত হবে । তারপর, আমি নাকি অনেক বড় বিজ্ঞানী হব,সবাই নাকি হতভম্ব হয়ে যাবে । তারপর,তারপর আমি নাকি সমস্ত বিশ্বের প্রেসিডেন্ট হব ।
যাক বাবা, হল্যান্ডের রুট গুলিত নাকি একবার বিশ্বকাপ হাতে তাচ্ছিল্যর সাথে খুব নাড়াচাড়া করছিল (মূল বিশ্বকাপ খেলের মাস কয়েক আগে, বেচারা সিকিউরিটির লোকের বার বার নিষেধ সত্ত্বেও ) - ওহ্,খুব শীঘ্রী ওটাতো আমাদের কাছেই আসছে । ঠিক তেমনি আমার ও মনে একটা তাচ্ছিল্যের ভাব কাজ করছিল , তা বাবা ,ফার্স্ট স্ট্যান্ড এ আর এমন কি কঠিন কম্ম । এর চেয়ে অনেক কঠিন কাজ৩ আমরা পারি। একরাত্রে গোয়েন্দা শাস্ত্রের বড় বড় সাবাড় করে ফেলা, বোস আইনস্টাইন,বঙ্কিম,টলস্টয় একদম তিলিসমাত সেরে ফেলা ।
একবার টয়ো ইন্জিনীয়ারিং এর জাপানী স্টান্ডার্ডের কলোনীতে আমাদের নীচ তলার একটা মাঝারী ক্যাটাগরীর একটা ছেলে মসজিদ ভিত্তিক পরীক্ষা নিয়ে তার আব্বা সহকারে ভোর সকালে হূযুরের সাথে ফিস ফিস করছে । কি ব্যপার , এই ছেলে এর আগে বৃত্তি পরীক্ষায় চান্স না পেয়ে বেশ বেকারার হয়ে গিয়েছিল, এখন বাপ ছেলে মিলে এসেছে মসজিদের পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়ার ষড়যন্ত্র করতে হুযুরের সাথে । অথচ যে কোন পরীক্ষায় আমার মনস্তাত্বিক সংবিধানে ফার্স্ট রেজাল্ট একমাত্র আমার,আমার জন্য,আমার দ্বারা । যা হোক ষড়যন্ত্র টের পের পেয়ে আমি হুজুরের কাছে পরিষ্কার সিলেবাসটা জানতে চাইলাম । পরীক্ষা শুরু হতে আর মাত্র তিন ঘন্টা বাকি । হুযুর আমাকে যে সিলেবাস বাতালেন তা অর্ধেক পারা হাফেজী পড়ার সমান - জানাজার নামাজের দোয়া,তারাবীর দোয়া,বিতর নামাজের দোয়া - বিস্তর দোয়ার ভান্ডারে আমি মশগুল হয়ে গেলাম । সব সাধারণ বাচ্চাদের দায়সারা গেছের পরীক্ষার পর আমারটা নেওয়া হলো যোহরের নামাজের শেষে । প্রায় ছয় ঘন্টা টানা মুখস্ত প্রতিভা হুজুরের কাছে জাহের করে আমি ফার্স্ট হলাম ।
সারাদিন পরীক্ষা নিয়ে ক্লান্ত হয়ে (বিশেষতঃ মেয়েদের সেকশনের দ্বায়িত্বশীল বড়হুজুর সব কাজ এই ছোট হুজুরের উপর ডাম্প করে কোথায় যেন গিয়েছিলেন) হুজুর দুপুর বেলায় আমাদের বাসায় খানা খেলেন । কিন্তু এতে রেজাল্ট হলো জালালী , আমার দন্ত উঁচা মেঝ বোন বলা নেই কওয়া নেই আনকোরা থার্ড হলো সে প্রকাশ্যে আমাকে বড় বড় গভীর খামচি দিত । পরদিন সকালে অবশ্য দেখা গেল ঐ ষড়যন্ত্রকারী ছেলেটাও যুগ্ম ফার্স্ট হয়েছে । যাই হোক প্রশ্নপত্র ফাঁস,মানদন্ড যাচাইয়ে অনিয়ম এ সব ব্যপেরে আমি অত্যন্ত নারাজ হলাম , এটা ছিল রোড গুলিতের ইউরোপ কাপ বিজয়ের বছর,'৮৯ সাল ।
পাশের বাসার কসির উদ্দিন (অল্প চিকন এক গাছি দাঁড়ির জন্য পিচ্চি মহলে সে এই নামে পরিচিত ছিল) কি প্রেসার দিল কে জানে ,তার সরু দুর্বল মেয়েটাও একেবারে ফার্স্ট হয়ে গেল । বাহ্, এক বিল্ডিং এ এত ফার্স্ট,সেকেন্ড ,যুগ্ম ফার্স্ট - স্ট্যাটিসকসে প্রকাশ হওয়ার পর হুজুর একটু ভড়কে গেলেন ।
শেষে ঐ বিল্ডিং এর স্কুল রেজাল্ট এর স্ট্যাটিকস বোঝানোর পর হুজুর একটু সান্ত্বনা পেলেন । নাহ, এক বিল্ডিং এ এত পীর ,কোন সমস্যা নাই । চারতলায় ফার্স্ট,ফার্স্ট, তিনতলায় সব নবজাতক ও হাঁটতে শিখেছে এমন পিচ্চি, দোতলায় ফার্স্ট,সেকেন্ড,নিচ তলায় এর আগে যারা ছিল তারাও নাম করা ফার্স্ট ।
তাছাড়া ফ্যাক্টরীর এম ডি সাহেবকে নদীর ধারের বটগাছের জ্বীন স্বপ্নে এই বিল্ডিং নিয়ে কি যেন বলেছে ।
ব্যস, কসির উদ্দিন সাহেব পার পেয়ে গেলেন । কিন্তু আমি অত্যন্ত নারাজ,'কিহ্, এক ঘর মে এথ্য ফীর,আই ন থাকুম ইহানে'। এর দুই বছরের মধ্যে আব্বা লিবিয়াতে একটা তেলের কোম্পানীতে যাওয়া আসা শুরু করলে আমি মতিঝিল স্কুলে চলে আসি ।
মতিঝিল সেন্ট্রাল গভঃ স্কুল - এটা নাকি সোহরাওয়ার্দী সাহেব প্রাইম মিনিস্টার থাকাকালে উদ্বোধন করে দিয়ে গিয়ে ছিলেন যাতে প্রতি বছর এখান থেকে ফার্স্ট স্ট্যান্ড হয় । কিন্তু সেই যে '৬২ সালে একটা ফার্স্ট স্ট্যান্ড হলো, এরপর তিন যুগ চলে গেল , আর কোন ফার্স্ট স্ট্যান্ডের দেখা মিলে না ।
স্কুলের টিচারদের একেবারে হা পিত্যেশ অবস্হা । আচ্ছা বাবা, ফার্স্ট স্ট্যান্ড এ আবার এমন কি কটিন কম্ম, হলে গিয়ে খাতায় একটু লেখালেখি করা । কিন্তু বিষয়টা যে এত জটিল আগে জানা ছিল না । ভূগোল পরীক্ষার দিন সব তালগোল হয়ে পাকিয়ে গেল । সামান্য এক্সিডেন্ট,হলে পৌঁছাতে দেরী
অনুপস্থিতি দেখে হলে ছাত্রদের মধ্যে টেনশন,স্কুলের টিচারদের মধ্যে হতাশা,মন্ত্রণালয়ে ফোন, বোর্ড কন্ট্রোলারের গাড়ি দিয়ে এসকর্ট করা - চারদিকে একদম ত্রাহি ত্রাহি এলাহী অবস্হা । যা হোক কচি মনে ভীষণ টেনশনে যান্ত্রিক হাতের লেখা যে কি হয়েছে তা বলা বাহুল্য ।
শেষ পর্যন্ত ফার্স্ট স্ট্যান্ড তো দূরের কথা বটে সামান্য একটা স্ট্যান্ডও হলোনা । কিন্তু অসংখ্য স্ট্যান্ডে একাকার হয়ে গেল বোর্ডের রেজাল্ট । একটি স্ট্যান্ড পজিশনে গঢ়ে ৬ জন করে ১২০ জন স্ট্যান্ড করল । সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, রেজাল্ট প্রকাশের প্রথম দিকে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে পাশাপাশি দুইটা স্কুল (মোহাম্মদপুর স্কুল এবং মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরী স্কুল ) থেকে ফার্স্ট স্ট্যান্ড করে । সপ্তাহ খানিক পরে আরও দুইটা ফার্স্ট স্ট্যান্ড যুক্ত হয় এখানেও একটা ছেলে ,একটি মেয়ে । আরও আশ্চর্যের বিষয় প্রথম জুটির কেউই কোনদিন কল্পনাও করেনি যে তারা কোনদিন স্ট্যান্ডও করবে ।
যা হোক, স্ট্যান্ড মাহাত্নের উপর চপেটাঘাত হিসেবে আরও আবিষ্কৃত হলো একটি ব্যাংকের ডিজিএম এর ছেলে যে নাম্বার বিভ্রাটের কারণে স্ট্যান্ড করতে পারেনি । কিন্তু দুই বছর পরে সে ঠিকই ফার্স্ট স্ট্যান্ড করেছিল,তার থেকে ২ নম্বর কম পেয়ে সেকেন্ড স্ট্যান্ড কোনদিন স্ট্যান্ডও করবে । যা হোক, স্ট্যান্ড মাহাত্নের উপর চপেটাঘাত হিসেবে আরও আবিষ্কৃত হলো একটি ব্যাংকের ডিজিএম এর ছেলে যে নাম্বার বিভ্রাটের কারণে করেছিল সেই ছেলেটি যে ২ বছর আগে বিলম্বে ঘোষিত ফার্স্ট স্ট্যান্ড করা ২য় জুটির একজন (এর দুই বছর পরে তাকে একটা নামকরা প্রাইভেট ভার্সিটির সামনে কার অপেখায় দাঁড়িয়ে থাকতে,এটা সময়ের অপচয় - তার দ্বারা ফ্লাইং ট্রেন না হোক অন্তত একটা রকেট বাস আবিষ্কৃত হওয়া উচিত ছিল),তার থেকে দুই নম্বর কম পেয়ে থার্ড স্ট্যান্ড করে একই কলেজের নাবিল ইমরান সিদ্দিকী যে বুয়েট ভর্তি টেস্টে রহস্যজনকভাবে একেবারে শেষের ৫৪৩ তম প্লেস করে । এত পরিসংখ্যান এত বছর পরেও মুখস্ত বলতে পারা থেকে বোঝা যায় স্ট্যান্ড না করাতে আমি কচি মনে কত কষ্ট পেয়েছিলাম
পরবর্তীতে আমি ট্রেডিশনাল পড়াশুনার উর্দ্ধে অনেক বেশী অধ্যয়নে নিয়োজিত হলাম ।ব্যাপক আপেক্ষিকতাবাদ ,গোয়েন্দা শাস্ত্র ও অবরোহ বিজ্ঞান ইত্যাদি ইত্যাদি।