প্রত্যেক মহান ঐতিহাসিক মনীষীদের আগমনের পুর্বে একজন অগ্রদূত তার আবির্ভাবের পুর্বাভাষ নিয়ে আসে।
তবে আমি যে তথাকথিত সোহাগ ভাই মেলবোর্নে ' আসিতেছি ' এই বিষয়ে অগ্রসেনা বলতে গেলে বলতে হয় নুসরাত হাবিব ভাইয়ার নাম । আসলে ওনি হলেন ললি ভাইয়া , নুসরাত হাবিব
ওনার আসল নাম । ছোট বেলায় আমাকে ভগ্নিত্রয় 'ভাইয়া' বলে সম্বোধন করত, কিন্তু কালের ধারাবাহিকতায় ধাপে ধাপে আমাকে শগা, সগ্যা এসব নামে ডাকা হয় , এমনকি আমাকে তুই তুকারি ও করা হয় ।
স্বল্প বেতনের হুজুরদের মত আমার প্রতি বিস্তর অবহেলা প্রদর্শন করা হয় ।(আমার সহি দ্বিন এশকে নবুয়তী প্লাটফরমে একটা গুরুত্বপূর্ণ কনসেপ্ট হল , হুজুরদের মাসিক খরচের টাকাকে হুজুররা বেতন মনে করলে হারাম হবে , সাধারণ লোকেরা এটাকে বেতন বললে নাজায়েজ ও শান- আদবের বরখেলাফ হবে ।
এটা হল হাদিয়া নুসরত ,যে তিনি দুরবর্তি এলাকা থেকে হিজরত করে দ্বীনি খেদমতে এসেছেন । তবে প্রচলিত ধারায় যে ভাবে সব চলছে তাতে দুই সাইড থেকেই দৃষ্টিভংগীর দিক দিয়ে সব নাজায়েজ ।
যেমনঃ শেয়ার মার্কেট জায়েজ তত্ত্বগতভাবে ,কিন্তু পরিচালনার সিস্টেমগত কারণে নাজায়েজ । আমি অনেক তবিলিগ সাথীকে
জানি যারা কেউ ৭ কোটি টাকা , কেউ ৫০ কোটি টাকা , কেউ ১২০ কোটি টাকা শেয়ারমার্কেটে ২০১০ সালে ধরা খেয়ে মানসিক যাতনায় আছেন । তবে জনগণের ৮৮ কোটি
টাকা আমানত ধরা খাওয়া এক সাথি পাবলিক চাপ ঠেকাতে জর্দানে ৪ মাসের সফরে চলে যাওয়া বিরাট বড় তেলেসমাতি । ইনি আবার হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠ ভক্ত শাগরেদ । হিমু টাইপ
কিছু আছে কিনা জানে । গররাজি মুরব্বিদের থেকে কিভাবে যেন রাজী করিয়ে মোট ৬ মাস দেশ ছাড়া । )
তো ললি ভাইয়ার কথায় আসা যাক। ওনি একজন মহান ব্যক্তি । ওনার উসিলাতেই আমি ধরে নিই যে ,ক্ষেতি খামারের দেশ অস্ট্রেলয়াতে এই ইউনিভার্সিটিটাই সবচে ভাল হবে বিদ্ধস্ত টুইন টাওয়ার
সহ সমস্ত আমেরিকান ইউনিভার্সিটি গুলো বাদ দিলে । ঢাকা শহরের যে প্রাইভেট ভার্সিটিতে আমি চুয়েট থেকে নাখোশ হয়ে চলে এসে কয়েক সেমিস্টার পড়েছিলাম সেখানে ফিজিক্স প্র্যাকটিকালে বিষয়ে
আমার থেকে দুই মার্ক বেশি পেয়ে ৯৭ মার্ক অর্জন করে ললি ভাইয়া হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন । আমি জাপানের শিবা ইউনিভার্সিটি থেকে এটমিক রিসার্চে সদ্য পি এইচ ডি করে আসা
টিচার মহোদয়কে তলব করলাম ,ঘটনা কি আসলে সঠিক কিনা ,"এক ঘরমে দু পীর" । বাড়ির উঠোন টাইপ ছোট্ট এই ভার্সিটি তে আমার ব্যাপারে মোটামুটি প্রবাদ উঠে এসেছিল যে
আমি নাকি ইচ্ছে করে বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষাই দিইনি একটা কবিতার ছন্দ মেলানো নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে (আসলে একটা সান্ধ্য দৈনিক পত্রিকার প্রোজেক্ট মাথায় চেপে ছিল , ভর্তি পরীক্ষা ভাল হয়নি ।
ওয়েটিং থেকে পড়ে মনে হয় মেটালার্জিতে উঠেছিল । ), তারপরে চিটাগাং ইঞ্জিনিয়ারিং বা চুয়েট নাকি আমার মোটেই ভাল লাগে নি মেক্যানিকাল এর ভাংগা পুরনো ল্যাবরেটরী দেখে,তাই
এই ভার্সিটিতে নাকি এসেছি কম্পিউটার নিয়ে গবেষণা করতে ,বিল গেটসের দিন নাকি আর বেশি দিন নাই ।
এত বেশি অপ বা শুভ প্রচারের পর স্টুডেন্ট তো দুরের কথা টীচাররা ও আমার একচ্ছত্র আধিপত্যবাদ এর কাছে কিছুটা মলিন থাকতেন ।
তো এটমিক রিসার্চে পি এইচ ডি করে আসা টিচার মহোদয় আমাকে ব্যাখ্যা করে বুঝালেন কিন্ডারগার্টেন টাইপ ইংলিশ মিডিয়াম থেকে সব তো আর গবেট হয় না ,দিন কাল বদলেছে কয়দিন পরে
দেখবা উন্নত
মাদ্রাসা হচ্ছে , বেতনও মাসে ২০ হাজার টাকা । স্যার আরো যেটা বললেন, এই ভার্সিটি থেকে এক যুগের মধ্যে অনেক ছেলে মাইক্রোসফট বা এ জাতীয় কম্পানীতে চাকরি করবে ।
এক ঘরমে দুই পীর -- বিষয়টা নিয়ে মনে খচখচ থাকলেও শেষে বিমল প্রীত হয়ে আবিষ্কার করা গেল পীর সাহেব প্রোগ্রামিং বা এ জাতীয় সাবজেক্ট গুলোতে ৯০ এর উপরে মার্ক পায় না ।
এবং আরো আবিষ্কার করা গেল পীর সাহেব যে ঢিলাঢালা জুব্বা টাইপ প্যান্ট শার্ট পরে ক্যাম্পাসে আসতেন এর কারণ ওনার আর কোন ভাই বোন নাই আর ওনার আম্মা আব্বা ওনাকে ছেলে
হিসেবে পোশাক পড়ায় ।
পীর সাহেব একজন মেয়ে বটে , আর ঢিলা ঢালা প্যান্ট শার্ট এর জন্য ওনাকে অন্যান্য মেয়েদের চেয়ে বেশি পর্দানশীন মনে হত । তখনো বাংলাদেশে উগ্র পোশাক -আশাক চালু হয়নি ।
শুধু একজন সিনিয়র আপু মেয়েলি আটো প্যান্টের উপর একটা সিম্পল টপস পড়ে আসত , আমাদের চেয়ে দুই বছরের সিনিয়র হওয়াতে আর খুব বেশি সামনে
না পড়াতে বিষয়টা শুধু টুপি দাঁড়ি ওয়ালা অত্যন্ত সুদর্শন এক বয়স্ক ছাত্রকে বলা হয়েছিল । এই বনেদি হুজুর বিশেষ ব্যবস্থায় পাজামা পাঞ্জাবি পড়ে আসতেন ।
এদিকে পীর সাহেব মহোদয়কে যখন মাঝে মধ্যে ওনার আম্মা সহকারে ক্যাম্পাসে আবিষ্কার করা গেল তখন ওনি আমার মত কেবলা টাইপ এটা বুঝতে পেরে ওনাকে ললি
ভাইয়া হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হল । আমার ভাই ,তোমার ভাই , ললি ভাই । তবে ছোট বেলা থেকে ব্রিলিয়ান্ট হওয়ার অহংবোধ থেকে আমি কখনও মেয়েদের সাথে তেমন কথা বলিনি ।
কাজেই ললি ভাইয়া জানতে পারেনি তার ললি ভাইয়া হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়টা ।
এদিকে আরো উচ্চতর আধিপত্য বিস্তারের জন্য আমি ডিবেট টীম প্রতিষ্ঠা করলাম । এ সময় আমার কম্পিউটার প্রোগ্রামিং টিচার (যিনি নাকি খুব খারাপ রিউমেটিক ফিভার এর
চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড থেকে ফেরত হয়ে শুধুমাত্র মেডিটেশন করে সুস্থ হয়েছিলেন , তখনও কোন্টাম মেথড বাংলাদেশে এত প্রচারিত হয়নি ) তিনি আমার ব্যপারে বিশেষ ভীত হয়ে
ফাইজার ফাইসন্স এর আই টি চীফ এর সাথে একটা সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করলেন ।
এই রিউমেটিক ফিভার ফেরত দুর্বল টীচারের উপরে ভর করে ভার্সিটি আমেরিকা থেকে সেই আমলের সাত কোটি টাকার একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়ে প্যাচে পড়ে গিয়েছিল ।
কাজটা পরে ব্যাংগালরে চলে গিয়েছিল । তো কিছুদিন আমরা সন্ধ্যায় সাত ফুট লম্বা ঢিলাঢালা পোশাক পরা এক আমেরিকান কে দেখতাম ভার্সিটির উঠোনে । এ সময় আমার
ইংরেজিতে কথা বলার দেমাগ বেড়ে গেল । ইংরেজী ডিবেট টীম প্রতিষ্ঠা করে সবাই যেন ক্যাম্পাসে বাধ্যতামুলক ইংরেজী কথা বলে এই উচ্চাশা ব্যক্ত করা হল। বিরক্ত হয়ে
সিনিয়র কিছু বড় ভাই কলিকাতা থেকে আলিয়া পাস করা এক স্যারকে সাথে নিয়ে বাংলা টীম প্রতিষ্ঠা করল । আর ইংরেজী টিমে আমার একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারকে প্রতিরোধ
করার জন্য ওনারা মগবাজার এর একটা ইংলিশ মিডিয়াম থেকে হঠাৎ আসা একটা বদখত কিসিমের ছেলেকে নিয়োগ করল ।
এই ছেলে বিশেষ ত্যাদর প্রকৃতির আর পুরো ভার্সিটিতে এর অনেক ফুফাত মামাত আত্নীয় টাইপ সিনিয়র ছাত্র আছে ।
তখনো বিল ক্লিনটনের হোয়াইট হাউসে ইহুদিদের পাতা ফান্দে পড়ে ( আমার গবেষণায় এটা ইহুদীদের সাথে মিলে ক্লিনটনের একটা মিউচুয়াল সেলফ সাবোটাজ
যে ব্যপারটা পরে হিলারিকে বুঝিয়ে নিজের ঘর বাঁচাতে পেরেছিল ) মনিকা সংক্রান্ত ইম্পিচমেন্ট ঘটনার রেশ কাটেনি ।
তো মগবাজারের ঐ ছেলেটা আমার কাছে এসে বিশেষ সবিনয়ে এসে বলল (ইংলিশ কমিউনিকেশন সাবজেক্টে আমার থেকে কম মার্ক পাওয়াতে সে আমার প্রতি কিছুটা বায়াত হওয়া ছিল ) ,
তার এক সিনিয়র খালাত বোন , আমাদের থেকে তিন সেমিস্টার সিনিয়র , আমার কাছ থেকে ম্যাথ বিষয়ের একটা এসাইনমেন্টের জন্য আমার ম্যাথ খাতাটা নিতে আসবে ।
এত সিনিয়র আপু ম্যাথ খাতা নিতে আসবে , আমার ম্যাথ খাতা । ক্যাম্পাসের না বলে ,বলা চলে পুরো বনানীতে সবচে গর্জিয়াস আপু । এখানে আছে আউয়াল সেন্টার,ইকবাল টাওয়ার , এ বি সি টাওয়ার
-- আরো কত কত টাওয়ার । [এই আপু পরে হয়ত বেটে খাটো আরেকজন প্রোগ্রামিং টিচারের গলায় নিকাহ নামার তখত ঝুলিয়ে সম্ভবত সিডনীতে গিয়ে তশরীফ রেখেছেন আর
অস্ট্রেলিয়ায় তবলিগের ব্যপক প্রভাবে এতদিনে হ্যাপি হুজুর হয়ে গেছেন হয়ত । নায়ক নায়িকারা হুজুর হলে তবলিগের সাথিদের মধ্যে বেশ শোরগোল পড়ে যায় ।
নতুন করে বিয়ে দিতে হলে ভিআইপি ব্যপক এন্তেজার আঞ্জাম শুরু হয়ে যায় ।
অস্ট্রেলিয়ায় ২০০৭ সালের পর থেকে
সবাই এত বেশি হুজুর হয়ে যায় বলে দিল্লীর চাপে বাংলাদেশি ছাত্রদের ভিসা কমিয়ে দিয়েছে ,এমনকি হাইকমিশন অফিস ও বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নিয়েছে ।]
এ সময় ইউ টিউবের মত একটা প্রি ম্যাচিওর কনসেপ্ট নিয়েও বেশ ব্যস্ত ছিলাম বলা চলে (স্যাটেলাইট ডিশ টিভির ব্রডকাস্ট হয়ে যাওয়া প্রোগ্রাম গুলো
কিভাবে সার্ভার থেকে রিট্রিভ করে পরে দেখা যেতে পারে ) আর কনসেপ্টটা উপস্থাপন করতে হবে রিউমেটিক ফিভার ফেরত স্যারের মধ্যস্থতায় ফাইজার ফাইসন্স আই টি চীফের
সামনে । তো গর্জিয়াস আপু আমাদের ক্লাস রুমের দরজায় মৃদু নক করে একটু আলতো প্রকাশিত হলেন , এতে রিউমেটিক ফিভার ফেরত ,
আমেরিকান ৭ কোটি টাকার প্রোজেক্টের ধকল সদ্য কাটিয়ে উঠা প্রোগ্রামিং স্যারের টিক টিক একটু বেড়ে গেল বা কমে গেল । সিনিয়র আপু যখন একান্ত আমারই দিকে ঈষৎ
ইশারা করে আমার
ম্যাথ খাতাটা দিতে বলল , রিউমেটিক ফিভার ফেরত স্যার এর ভেতরের টিক টিক তখন স্টপ হয়ে গেছে মনে হয় (ভাগ্যিস, স্যারের আব্বাকে আবার নতুন করে ছেলেকে থাউল্যান্ড পাঠাতে হয়নি) ।
আমি উঠে গিয়ে বাধ্য ছেলের মত আপুকে আমার ম্যাথ খাতাটা দিয়ে এলাম । কিন্তু হাস্যকর বিষয় হল, আমার খাতাটা ব্যাগের আরেক পকেটের নুডুলসের বাটি থেকে অতিরিক্ত তেলে তৈলাক্ত
হয়ে গিয়েছিল । খাতাটা হাতে নিয়ে তৈলাক্ত হস্তে আপু বিদায় হলেন ।
আমার পীর সাহেব আম্মা ঐদিন কি নুডলস পাকিয়ে দিয়েছিলেন কে জানে ।
আরো হাস্যকর বিষয় হল , মগবাজারের ছেলেটা কয়েকদিন বাদে নয় মণ ময়দা বস্তা টাইপ এক মনিকার আপুর ব্যপারে ভীষণ ক্লিনটন দেবদাস হয়ে একেবারে নিকাহ মোবারক সেরে
ভাল হয়ে গেল।
শেষমেষ , ডিবেটে প্রথম চান্সেই ইংলিশ টীম সারা দেশে রানার আপ হলেও বাংলা টীম ভীষণ নাস্তানাবুদ হয়।
জীবন উদ্দীপনী বিশেষ অন্তর্গত প্রেরণা/উহ্য আনন্দময় তাড়না যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাথারণ আটপৌরে কাজ সমাধা করতে সাহায্য করে - তা একেক জনের জীবনে একেক রকম । কেউ তার সন্তানের জন্য,কেউ তার বাবা মায়ের জন্য,কেউবা একটু শিক্ষীত হওয়ার জন্য- নানান জনের বেচেঁ থাকার নানান আনন্দ। ঘটনার গূড় রহস্য সমাধানের জন্য একজন বর্ষীয়ান তাত্বিক গোয়েন্দা যেমন একটি বিশেষ সূত্র ধরে ধৈর্য্যের সাথে ক্লান্তিকর বিশ্লেষণের পথে এগিয়ে যেতে থাকে আর যতই তার বিশ্লেষণের বিশেষ সূত্র বাস্তবতার সাথে মিলতে থাকে ততই এক অব্যক্ত আনন্দের শিখা তার চেহারায় দমক দিতে থাকে,তেমনি প্রত্যেকের জীবনে বেচেঁ থাকার এক অব্যক্ত আনন্দ শিখা কাজ করে। কিন্তু সভ্যতা সন্জীবনী যে মহান শক্তি যা মানুষের অন্তরের গভীরতম স্তর থেকে উদগত হয় যেই শক্তির বিকিরণে সমস্ত বিশ্ব সভ্যতা উপকৃত হয়,তা অবশ্য অন্তরের উপর সুদীর্ঘ সময়ধরে চরমতম আবেগের জটিলতম কষাঘাত,কঠোরতম পীড়ন যাতনা প্রেষণা থেকে আসে । 'খাতা' নামক ছোট গল্পে একেবারে কমবয়সী সবেমাত্র বিয়ে হওয়া গৃহবধু সারাদিনের কাজ শেষে তার বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে আসা খাতা নিয়ে একাকী বসে থাকে -- এটা তার বেচেঁ থাকার উদ্দীপনী আনন্দ শিখা। কিন্তু শ্বশুর বাড়ির বুড়ো মহিলারা যখন তার খাতাটা কেড়ে নিল,আস্তে আস্তে সে শুকাতে লাগল,একসময় মরে গেল। অন্যদিকে ,সুলতানী আমলের শাসকগোষ্ঠীর মদদপুষ্ট মুনাফাপ্রাপ্ত পিয়ারী থাক গোত্রের মঁসিয়ে দ্বারকানাথ এর বংশপরম্পরা ধারায় জমিদার রবীন্দ্রনাথের অল্প বয়সের কচি মনে বড় ভাইয়ের স্ত্রীর আত্নহত্যার ঘটনায়(গোয়েন্দা দৃষ্টিকোণ থেকে এটাকে অনেকে ) মানব হত্যা বলে থাকেন যেমনটি ডায়ানার বেলায় বলা হয়ে থাকে,অবশ্য পিয়ারী থাক গোত্রের বিশেষ মেজাজ হলো বংশশুদ্ধি বজায় রাখা, যা বিভিন্ন রীতি আচারের কারণে অন্যরা বা অন্য গোত্রগুলো হয়ত বজায় রাখতে দায়বদ্ধ নয়। এজন্য এই জমিদার বাড়ির অধিকাংশ বিয়ে পাত্রের অমতে একদম নন ক্যারিশমেটিক সাধারণ খুব কাছের মেয়ের সাথে দেওয়া হতো অবশ্য বুড়ো বয়সে বিয়ে আলাদা বিষয়। এই শুদ্ধি মেজাজ থেকে রবীন্দ্রনাথ ঢাকার ব্রাম্ম সমাজের প্রতি বেশ একাত্নতা পোষণ করত ) চরমতম কষ্টের তীব্র কষাঘাতে যে শক্তি উৎসারিত হলো তা সাধারণ ব্যক্তিসত্তার গন্ডি পেরিয়ে সভ্যতা সন্জীবনীর পর্যায়ে উত্তোরিত হলো । কষ্টে কষ্টে বেচারা অবুঝ কচি বুকটা ঝাঁজরা হয়ে গিয়েছিল। 'ছবি তুমি শুধুই ছবি' কবিতাটিতে এমন এক অব্যক্ত আকুতি প্রচ্ছন্ন যা প্রশ্নাতীত। আহ্,এত বড় নীহারিকা,গ্যালাক্সি- বিশ্ব চরাচরে বিশালতার মাঝে তুমি কি শুধুই নীরব একটা ছবি- আহ্ কি কষ্ট ,কোনভাবে কি এই ছবি অল্প একটু বাস্তবতা নিয়ে হেসে উঠতে পারেনা ? কচি কিশোর চেয়েই থাকে,চেয়েই থাকে । আর তার অন্তরে এমন এক আবেগ সঞ্চারিত হতে থাকে যার তীব্র কষাঘাতে উৎসারিত হতে সেই মহান সভ্যতা সন্ঞ্জীবনী শক্তি যার বিচ্ছুরিত আভায় উদ্ভাসিত হয় অন্ধকার সমাজের জীর্ণ ঘুপসি। ঠিক তেমনি আমার নানা তাঁর প্রথম স্ত্রীকে এমন ভালবেসেছিলেন,আর নানী নানাকে ছেড়ে চলে যাওয়াতে নানা এমন কষ্ট পেয়েছিলেন যে বলার বাইরে। নানা নানীকে নিজের টাকায় ডিগ্রী পর্যন্ত পড়িয়েছিলেন,এমনকি নিজের হাতে নানীর কাপড় ধুয়ে দিতেন। কিন্তু লেখাপড়া শিখে বিশেষ হাইফাই হয়ে নানী চলে গেলেন জিন্না আমলের এক সচিবের কাছে । আহ্, এত কষ্ট কেন ভালবাসায়,কেন? কষ্টে কষ্টে নানা আরও দুটো বিয়ে করেছিলেন। একটা আমার নিজ নানীকে.আরেক ঘটকগিরি করতে গিয়ে, বিয়ের দিনে ত্যাদড় ভাগ্নে পাত্র লাপাত্তা,শেষে বয়স্ক লোকেদের চাপে ঘটক মামাকে বিয়ে করতে মূদূ হেসে মৌন সম্মতি দিতে হলো । অবশ্য ঘটকগিরি আর বিবাহ করা দুয়োটাই উত্তম সমাজ সেবা । এ ব্যপারে দুষ্ট লোকেরা কি বলে তাতে কিছু যায় আসে না। নানা সাহেব আবার তবলিগের আমীর ছিলেন সেই '৬৫ সাল থেকে । সন্দ্বীপ পীর সাহেব রহমতুল্লাহ আলায়হি কে দিয়ে নিজ থানায় মাদ্রাসা করিয়েছিলেন। পীড় সাহেব এর পরে চিটাগাং হাইওয়েতে মাদানীনগর মাদ্রাসা করেন । কিন্তু হাইফাই নানীর চলে যাওয়ার পর থেকে নানার অবচেতন মনে কষ্টের এমন এক লু হাওয়া হামেশাই বয়ে যেত যে নানা প্রায়শঃ তার আকুতি প্রকাশ করে নিষ্কলুষ বার্তাবাহক পাঠাতেন। নানীর ধারী ধারী ছেলেরা তেড়ে আসত মারতে । নানী বুঝিয়ে সুঝিয়ে বার্তাবাহককে ফেরত পাঠাতেন। ঢাকায় বেড়াতে এসে কাজী নজরুল এক গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলে একটি অস্ফুট মসৃণ আলোক রশ্মি দেখতে পেলেন। নজরুল সাহেব আনমনে ঐ আলোক ধারাকে অনুসরণ করতে গিয়ে বেরিয়ে রাস্তা পার হয়ে আরও এগিয়ে দেখলেন আলোটি একটা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ -সেখানে ঘুমিয়ে আছে সদ্য বিলাত ফেরত ক্যামব্রীজ থেকে অংকে পিএইচডি করা ফজিলতুন্নেসা। আহ্,রাজকন্যে তোমার ঘুম ভাংলেই সকাল হলেই বিবাহের প্রস্তাব নিবেদন করব। যতই থাকুক না তোমার ছলাকলা ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল মিঃ গুপ্ত না কি যেন নাম তার সাথে,ওকে এভয়েডের অভিমানে একদম আলুফালু করে দিব। আমরা হব মহান জুটি,চারিদিকে ব্রাভো ব্রাভো পরে যাবে। কিন্তু মশিয়ে কবি নজরুল এলাকার ছেলেদের হাতে পিটুনি খেয়ে কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করেন(সূত্রঃ কাজী নজরুলের উপর ডঃ রফিকুল ইসলামের পিএইচ ডি থিসীস ) সে যাই হোক,আমার নানা চতূর্থ আরেকটি বিবাহ করার জন্য প্রায় মনস্থির করেছিলেন -কলেজে যাওয়া আসা করে এচজন মহিলা টিচার এর ব্যপারে মৃদু অভিসন্ধি ও নাকি ভক্ত মহলে প্রকাশ করেছিলেন । কিন্তু ততদিনে আমার নিজ নানীর সংসারে অনেক নাতী পৃথিবীতে তশরিফ রাখায় বা চলে আসায় বিষয়টা আর বেশী দূর এগুতে পারেনি । তবে বড় হয়ে ৩ চিল্লা (তবলিগে দ্বীনের রাস্তায় করার পর ) আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, নাতী হিসাবে আমি অবশ্যই নানাকে চতূর্থ বিবাহ করতে সহযোগিতা করতাম। অনেক গবেষণার পর আমি বুঝতে পারলাম নানার প্রথম নানীর ব্যপারে ভালবাসাটা ছিল একান্তই শিক্ষা সংক্রান্ত। অর্থাৎ এশ্কের জোশটা ছিল শিক্ষা আর প্রগতির দিকে। শিক্ষা একজন নারীকে পরিচ্ছন্ন করে, কাপড় পোশাক পরিপাটি করে পরিধান করে,সাধারণ আটপৌরে গ্রাম্য মহিলাদের মতো অল্প বয়সে লেদভেদ হয়ে যায় না,কথা বলে আকর্ষণীয় ভঙ্গীতে মার্জিত কন্ঠে শুদ্ধ ভাষায়। । ইত্যাদি ইত্যাদি । নাতি হিসেবে আমি নাকি অনেক বেশি পাকনা আর আমার মত কড়া হুজুর নাকি অতীতেও ছিলনা -- এটা আমার নিজ নানীর মন্তব্য । তিনি অবশ্য আমার মেজ ভগ্নি কে বেশি দিল দিতেন । মোদ্দা কথা,শিক্ষা একটা জাতির মানব সম্পদের মান উন্নয়ন করে যার প্রভাব পরবর্তী প্রজন্মের উপর হয় আরও ব্যপক ও সুদূর প্রসারী। তো শিক্ষা সংক্রান্ত এই ব্যপক এশ্ক,ভালবাসা,আবেগের মর্মযাতনা প্রসূত সভ্যতা সন্ঞ্জীবনী যে শক্তি সে সংক্রান্ত খেলাফতটা নানা মনে হয় আমার নিজ আম্মা হূযুরের দিকে ধাবিত করেছেন। আম্মাকে তিনি সিদ্বেশ্বরী স্কুল ও কলেজে পড়িয়েছেন । আম্মা হুযুরের বড়মামা ছিলেন ঐ ইস্কুলের হেড মৌলভী । নানা টাকা পয়সা দিয়ে মামাদেরকে ঢাকায় ঘর দুয়ার বানাতে দ্রুত সহায়তা করলেন । বিরাট এলাহী ব্যপার বৈকি । ক্লাস নাইনের জন্য আশেপাশে কোন গার্লস স্কুল না থাকাতে নানা মশায় আম্মাকে ভর্তি করাতে পারছিলেন না । আবার লেখাপড়ায় ভাল হওয়ার কারণে নতুন বছরের ক্লাস শুরু হয়ে গেছে এই টেনশনে আম্মা হুজুর যা খেতেন তা উল্টে আসতে ছিল ,মানে খেতে পারছিলেন না। নানা মশায়, নানার মা ও ঢাকা থেকে জরুরী তলবে আসা আম্মার বড় মামা গোপন মিটিং এ বসে সাব্যস্ত করলেন আম্মাহুজুর ওনার বড় মামার ওখানে থেকে সিদ্বেশ্বরী স্কুলে পড়বেন। অবশ্য হজ্জ্বে যাওয়ার আগে পরের বছরই নানা আমার আব্বার সাথে আম্মা হুযুরের বিবাহ দিয়ে যান । আব্বা এমন মেধাবী ছিলেন যে একটা পূষ্ঠা একবার দেখলেই মুখস্ত বলতে পারতেন । আম্মা হুযূরের পড়াটা ডিগ্রী পর্যন্ত পৌঁছেছিল, কিন্তু আমার বড় বোনের জন্ম হওয়ায় ডিগ্রী পরীক্ষা আর দিতে পারেননি । পরবর্তী জেনারেশনের তোড়জোড় হলো আমাকে নিয়ে । তিনকন্যার পর ,একমাত্র পুত্র সন্তান । আমার জন্মের আগের রাতে আম্মা হূযুর নাকি স্বপ্নে হাতে চাঁদ পেয়েছেন । স্কুলের পরীক্ষা গুলোতে অসাধারণ সব রেজাল্ট,চারদিকে হৈচৈ পড়ে গেল । কি এক এলাহী ব্যপার । আমি নাকি সার্খ্যাৎ বোর্ডে ফার্স্ট স্ট্যান্ড করব । সকাল বেলায় মঁসিয়ে খালারা চোখ কচলাতে কচলাতে বাবা মায়ের সাথে আমার ছবি পত্রিকায় দেখে ভীষণ আহ্লাদিত হবে । তারপর, আমি নাকি অনেক বড় বিজ্ঞানী হব,সবাই নাকি হতভম্ব হয়ে যাবে । তারপর,তারপর আমি নাকি সমস্ত বিশ্বের প্রেসিডেন্ট হব । যাক বাবা, হল্যান্ডের রুট গুলিত নাকি একবার বিশ্বকাপ হাতে তাচ্ছিল্যর সাথে খুব নাড়াচাড়া করছিল (মূল বিশ্বকাপ খেলের মাস কয়েক আগে, বেচারা সিকিউরিটির লোকের বার বার নিষেধ সত্ত্বেও ) - ওহ্,খুব শীঘ্রী ওটাতো আমাদের কাছেই আসছে । ঠিক তেমনি আমার ও মনে একটা তাচ্ছিল্যের ভাব কাজ করছিল , তা বাবা ,ফার্স্ট স্ট্যান্ড এ আর এমন কি কঠিন কম্ম । এর চেয়ে অনেক কঠিন কাজ৩ আমি পারি। একরাত্রে গোয়েন্দা শাস্ত্রের বড় বড় বই সাবাড় করে ফেলা, বোস আইনস্টাইন,বঙ্কিম,টলস্টয় একদম তিলিসমাত সেরে ফেলা । একবার টয়ো ইন্জিনীয়ারিং এর জাপানী স্টান্ডার্ডের কলোনীতে আমাদের নীচ তলার মাঝারী ক্যাটাগরীর একটা ছেলে মসজিদ ভিত্তিক পরীক্ষা নিয়ে তার আব্বা সহকারে ভোর সকালে হূযুরের সাথে ফিস ফিস করছে । কি ব্যপার , এই ছেলে এর আগে বৃত্তি পরীক্ষায় চান্স না পেয়ে বেশ বেকারার হয়ে গিয়েছিল, এখন বাপ ছেলে মিলে এসেছে মসজিদের পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়ার ষড়যন্ত্র করতে হুযুরের সাথে । অথচ যে কোন পরীক্ষায় আমার মনস্তাত্বিক সংবিধানে ফার্স্ট রেজাল্ট একমাত্র আমার,আমার জন্য,আমার দ্বারা । যা হোক ষড়যন্ত্র টের পের পেয়ে আমি হুজুরের কাছে পরিষ্কার সিলেবাসটা জানতে চাইলাম । পরীক্ষা শুরু হতে আর মাত্র তিন ঘন্টা বাকি । হুযুর আমাকে যে সিলেবাস বাতালেন তা অর্ধেক পারা হাফেজী পড়ার সমান - জানাজার নামাজের দোয়া,তারাবীর দোয়া,বিতর নামাজের দোয়া - বিস্তর দোয়ার ভান্ডারে আমি মশগুল হয়ে গেলাম । সব সাধারণ বাচ্চাদের দায়সারা গেছের পরীক্ষার পর আমারটা নেওয়া হলো যোহরের নামাজের শেষে । প্রায় ছয় ঘন্টা টানা মুখস্ত প্রতিভা হুজুরের কাছে জাহের করে আমি ফার্স্ট হলাম । সারাদিন পরীক্ষা নিয়ে ক্লান্ত হয়ে (বিশেষতঃ মেয়েদের সেকশনের দ্বায়িত্বশীল বড়হুজুর সব কাজ এই ছোট হুজুরের উপর ডাম্প করে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন) হুজুর দুপুর বেলায় আমাদের বাসায় খানা খেলেন । কিন্তু এতে রেজাল্ট হলো জালালী , আমার দন্ত উঁচা ভ্যাবদা ফর্সা মেঝ বোন বলা নেই কওয়া নেই আনকোরা থার্ড হয়ে গেল । সে হুজুরকে অত্যন্ত আপ্যায়ন করে বিবিধ তরকারী এগিয়ে দিয়েছিল । সে প্রকাশ্যে আমাকে বড় বড় গভীর খামচি দিত এবং আমাকে ও আমার ভগ্নিত্রয়ের মধ্যে ছোট জনকে কোন কারণ দর্শানো ছাড়াই বাচ্চাদের খেলার টিম থেকে বাদ দিয়ে দিত । । পরদিন সকালে অবশ্য দেখা গেল নিচতলার ঐ ষড়যন্ত্রকারী ছেলেটাও যুগ্ম ফার্স্ট হয়েছে । যাই হোক প্রশ্নপত্র ফাঁস,মানদন্ড যাচাইয়ে অনিয়ম এ সব ব্যাপারে আমি অত্যন্ত নারাজ হলাম , এটা ছিল রোড গুলিতের ইউরোপ কাপ বিজয়ের বছর,'৮৯ সাল । পাশের বাসার কসির উদ্দিন (অল্প চিকন এক গাছি দাঁড়ির জন্য পিচ্চি মহলে সে এই নামে পরিচিত ছিল) কি প্রেসার দিল কে জানে ,তার সরু দুর্বল মেয়েটাও একেবারে ফার্স্ট হয়ে গেল । বাহ্, এক বিল্ডিং এ এত ফার্স্ট,সেকেন্ড ,যুগ্ম ফার্স্ট - স্ট্যাটিসকসে প্রকাশ হওয়ার পর হুজুর একটু ভড়কে গেলেন । শেষে ঐ বিল্ডিং এর স্কুল রেজাল্ট এর লিস্ট স্ট্যাটিকস বোঝানোর পর হুজুর একটু সান্ত্বনা পেলেন । নাহ, এক বিল্ডিং এ এত পীর ,কোন সমস্যা নাই । স্কুল রেজাল্টে এই বিল্ডিং এ চারতলায় ফার্স্ট,ফার্স্ট, তিনতলায় সব নবজাতক ও হাঁটতে শিখেছে এমন পিচ্চিরা এদের একজনের আব্বা অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট ।এম এস সি তেও , দোতলায় ফার্স্ট,সেকেন্ড, নিচ তলায় এর আগে যারা ছিল তারাও নাম করা ফার্স্ট ছাত্র ছিল । তাছাড়া ফ্যাক্টরীর এম ডি সাহেবকে নদীর ধারের বটগাছের জ্বীন স্বপ্নে এই বিল্ডিং নিয়ে কি যেন বলেছে । ব্যস, কসির উদ্দিন সাহেব পার পেয়ে গেলেন । কিন্তু আমি অত্যন্ত নারাজ,'কিহ্, এক ঘর মে এথ্য ফীর,আই ন থাকুম ইহানে'। এর দুই বছরের মধ্যে আব্বা লিবিয়াতে একটা তেলের কোম্পানীতে যাওয়া আসা শুরু করলে আমি মতিঝিল স্কুলে চলে আসি । মতিঝিল সেন্ট্রাল গভঃ স্কুল - এটা নাকি সোহরাওয়ার্দী সাহেব প্রাইম মিনিস্টার থাকাকালে উদ্বোধন করে দিয়ে গিয়ে ছিলেন যাতে প্রতি বছর এখান থেকে ফার্স্ট স্ট্যান্ড হয় । কিন্তু সেই যে '৬২ সালে একটা ফার্স্ট স্ট্যান্ড হলো, এরপর তিন যুগ চলে গেল , আর কোন ফার্স্ট স্ট্যান্ডের দেখা মিলে না । স্কুলের টিচারদের একেবারে হা পিত্যেশ অবস্হা । আচ্ছা বাবা, ফার্স্ট স্ট্যান্ড এ আবার এমন কি কটিন কম্ম, হলে গিয়ে খাতায় একটু লেখালেখি করা । কিন্তু বিষয়টা যে এত জটিল আগে জানা ছিল না । ভূগোল পরীক্ষার দিন সব তালগোল হয়ে পাকিয়ে গেল । সামান্য এক্সিডেন্ট,হলে পৌঁছাতে দেরী অনুপস্থিতি দেখে হলে ছাত্রদের মধ্যে টেনশন,স্কুলের টিচারদের মধ্যে হতাশা,মন্ত্রণালয়ে ফোন, বোর্ড কন্ট্রোলারের গাড়ি দিয়ে এসকর্ট করা, আর্মির বিশেষ প্রহরা - চারদিকে একদম ত্রাহি ত্রাহি এলাহী অবস্থা । যা হোক কচি মনে ভীষণ টেনশনে যান্ত্রিক হাতের লেখা যে কি হয়েছে তা বলা বাহুল্য । শেষ পর্যন্ত ফার্স্ট স্ট্যান্ড তো দূরের কথা বটে সামান্য একটা স্ট্যান্ডও হলোনা । কিন্তু অসংখ্য স্ট্যান্ডে একাকার হয়ে গেল বোর্ডের রেজাল্ট । একটি স্ট্যান্ড পজিশনে গঢ়ে ৬ জন করে ১২০ জন স্ট্যান্ড করল । সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, রেজাল্ট প্রকাশের প্রথম দিকে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে পাশাপাশি দুইটা স্কুল (মোহাম্মদপুর স্কুল এবং মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরী স্কুল ) থেকে ফার্স্ট স্ট্যান্ড করে । সপ্তাহ খানিক পরে আরও দুইটা ফার্স্ট স্ট্যান্ড যুক্ত হয় এখানেও একটা ছেলে ,একটি মেয়ে । আরও আশ্চর্যের বিষয় প্রথম জুটির কেউই কোনদিন কল্পনাও করেনি যে তারা কোনদিন স্ট্যান্ড করবে । যা হোক, স্ট্যান্ড মাহাত্নের উপর চপেটাঘাত হিসেবে আরও আবিষ্কৃত হলো একটি ব্যাংকের ডিজিএম এর ছেলে যে নাম্বার বিভ্রাটের কারণে স্ট্যান্ড করতে পারেনি দুই বছর পরে সে ঠিকই ফার্স্ট স্ট্যান্ড করেছিল ঢাকা কলেজ থেকে ,তার থেকে ২ নম্বর কম পেয়ে সেকেন্ড স্ট্যান্ড ২ বছর আগে বিলম্বে ঘোষিত ফার্স্ট স্ট্যান্ড করা ২য় জুটির একজন ছেলে , তার থেকে দুই নম্বর কম পেয়ে থার্ড স্ট্যান্ড করে একই কলেজের নাবিল ইমরান সিদ্দিকী যে বুয়েট ভর্তি টেস্টে রহস্যজনকভাবে একেবারে শেষের ৫৪৩ তম প্লেস করে । এত পরিসংখ্যান এত বছর পরেও মুখস্ত বলতে পারা থেকে বোঝা যায় স্ট্যান্ড না করাতে আমি কচি মনে কত কষ্ট পেয়েছিলাম। কলেজে আমি ট্রেডিশনাল পড়াশুনার উর্দ্ধে অনেক বেশী অধ্যয়নে নিয়োজিত হলাম ।ব্যাপক আপেক্ষিকতাবাদ ,গোয়েন্দা শাস্ত্র ,বাংলা সাহিত্য ,বিশ্ব ইতিহাস ইত্যাদি ইত্যাদি।
নামজ কালাম চালু হওয়া ছেলে গুলো আমাকে যে সিনিয়র আপার আস্তানায় সমর্পণ করল
সেখানে কে বা কারা থাকে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । ছেলেগুলো আমার মাল সামানার বিরাট বহর তাদের ছোট্ট আধ ভাংগা ঢেড ঢেডরা একটা লাল গাড়িতে করে নিয়ে এসে আমাকে
শুদ্ধ ডাম্প করে দিয়ে দায়মুক্ত হয়ে চলে গেল । পুরো বাড়িতে কেউ নেই ,আমি একা । আর এগুলো মোটেই শহর এলাকা না , আধা শহুরে । ঘর বাড়ি সব একতলা , ডুপ্লেক্স তেমন নজরে
পড়ে না ।
আমি রীতিমত ভীত হয়ে গেলাম । আমাকে ডাইনিং রুম টাইপ একটা রুমে থাকতে বলা হয়েছে । যার প্রবেশ মুখে প্লাস্টিকের কভার টানা দিয়ে এটাকে আলাদা রুমের মত
দেখানো হয়েছে ।
তবে রুমটা বেশ বড়। ইলেকট্রিক রুম হিটারও আছে । পুরো ভারি কার্পেটের উপর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে হিটারটা অন করে আমি আমার সামান্য একটা বেডিং লম্বা করে বিছিয়ে দিলাম ।
আমার জামা কাপড়ের স্টক যত বিশাল শোবার কম্বল লেপ কাঁথার স্টক তেমন শুণ্যের কোঠায় । আমি ভেবেছিলাম অস্ট্রেলিয়ায় এসে এগুলো কিনব । তো মোতোওয়াল্লি টাইপ দাঁড়িওয়ালা
হুজুর ভাই ওনার এক শাগরেদকে আমার সাথে দিয়েছিলেন যেন একটা শপিং স্টোর থেকে এগুলো কিনে নিয়ে আসি । কিন্তু ঝানু শাগরেদ মশায় ঝানু কফির অর্ডার দিল , এতে আমার ছয় ডলার
চলে যাওয়াতে আমি বিরক্ত হয়ে গেলাম । কিপ্টেমি করে আমি কম ভারি একটা সাধারণ ব্লাংকেট নিলাম । সাধারণ বাংলাদেশীদের কাছে এসে কেন জানি আমাকে কিপ্টেমি পেয়ে বসেছিল ।
মনে হচ্ছে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে । আমি রান্না ঘরে গেলাম , কেমন যেন সব খাপ ছাড়া মনে হচ্ছে । টয়লেট চেক করলাম । নিতান্তই সরু ।
তারপর আরেকটু ইনভেস্টিগেশনের জন্য মোট তিনটা রুমে উঁকি দিলাম । মানব বসতি আছে বলেই মনে হল ,লাক্সারিয়াস সব হেভি জিনিসপত্র । তবে ভেতর থেকে লক করা না কেন ,এটা
আবার কোন বিদেশী স্টাইল ।
আমার তেমন ভাল লাগছিল না ।তাছাড়া রান্না করার বিষয়টা পুরো সাহসে আসছেনা । কাজেই খাবার দাবারের জন্য চলে গেলাম হেঁটে হেঁটে ঐ ছেলেগুলোর বাসায় ।
খুঁজে পেতে একটু সময় লাগল । এরা তেমন কোন জব টব করে না , অলস টাইপের । খাওয়া দাওয়া সেরে বসে থাকলাম । আমাকে বুঝানো হলো আপারা বাসায় চলে এলেই আর ভয় টয়
লাগবে না । তবে আপারা ঠিক কবে বাসায় ফেরত আসবে তা আর আমাকে বলা হল না ।
আমাকে আরো বুঝানো হল আমার শ্রদ্ধেয় ললি ভাইয়াও কোন সামারের ভেকেশন বাংলাদেশে কাটিয়ে এসে নাকি এই বাসায় ছিলেন ঠিক ঐ রুম টাতে যেখানে আমাকে জায়গা দেওয়া হয়েছে ।
ললি ভাইয়া এখানে ছিলেন শুনে আমি একটু আশ্বস্ত হলাম ।
সাহস নিয়ে আবার হেঁটে হেঁটে ভুতুড়ে বাসায় চলে গেলাম । কোথাও কেউ নেই । কিন্তু সুবে সাদিকের আগেই আমি ঐ নামাজ কালাম চালু হওয়া ছেলেগুলোর বাসায় গিয়ে দরজায় ধাক্কা ধাক্কি করতে
লাগলাম । এরা মনে করল আমার বোধহয় খুব ক্ষিধে পেয়েছে , তাই তাড়াতাড়ি রুটি জেলি এগুলো আমার সামনে বের করে দিয়ে আবার যার যার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল ।
আমি ভীষণ মন খারাপ করে একটা লক্কর ঝক্কর টিভি সেট সামনে ছিল ,সেটা অন করলাম । জোয়ান অফ আর্ক মুভিটা চলছিল । এখানে ঘন্টা দুই পার করলাম ।
এদিকে আরো ঘন্টা খানেক পরে এদের যার যার এলার্ম ঘড়ি আওয়াজ দিতে লাগল । মানে স্কুলে যাওয়ার সময় হয়েছে । আমি আবার ভুতুড়ে বাড়িতে গিয়ে কিছুটা তৈরি হয়ে ক্যাম্পাসের
উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম । ক্যাম্পাস যাওয়া মানে আধা ঘন্টা হাঁটা ।
এদিকে বার বার অন্যদের বাড়িতে খেতে চলে যাই বলে বিশেষ লবিং করে ছেলেগুলো অন্তঃত একজন সিনিয়র আপাকে ওনাদের নীড়ে প্রকাশিত হয়ে বাধিত করতে আজ্ঞা হয় বলে
সবিনয়ে কাতর অনুরোধ জানাল সম্ভবত । দুইদিন পরে ভোর সকালে একজন আপাকে পাওয়া গেল কিচেনে ।
আপা রান্না বান্না একটা সহজ বিষয় এই কিচেনে এরকম বুঝাতে লাগলেন । এই কিচেনকে বেশ গোছালো একটা কিচেন হিসেবে ও অভিহিত করলেন ।
আমি প্রথম সুযোগে এখানে কয়জন আপা থাকেন, কি তাদের পরিচয় আর কোথায় বা তারা কি করেন -- এসব জানতে চাইলাম । ইনারা সংখ্যায় তিনজন , প্রত্যেকেই পড়াশুনা করেন ।
আরেকজন ছেলে স্টুডেন্ট ও এখানে থাকেন ,ওনার রুমে আবার হাই টেক ডেক সেট ও আছে ।
কিচেনে আবির্ভূত এই আপা অন্য আপা দ্বয় শীঘ্রই বাসায় আসবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করে আমার জন্য নুডলস রেঁধে দিলেন ।
আমি সাত পাঁচ নানান টেনশনে রান্নার ধারাটা শিখে নিতে পারিনি যে কারণে পুরো ছয়মাস আমি ডিম খেয়েই কাটিয়েছিলাম । আমার নামও দেওয়া হয়েছিল এগ মশাই বা ডিম মিয়া ।
আপা সাহেব ত্রস্ত গতিতে আবার চলে গেলেন বাইরে কোথাও । আমি হুমম বলে গভীর চিন্তায় পড়ে গেলাম , বাসাটা আসলেই ভুতূড়ে ।
নুডলস খেতে খেতে মনে মনে ভাবছিলাম হয়ত প্রকৃতি শুণ্য স্থান পুরণ করে দেয় এই পলিসিতে আমার সুবিধার জন্য তিন ভগ্নি এখানে প্রাকৃতিক ভাবেই আছে ।
কিন্তু পরে অনেক সাত পাঁচ ভেবে চলে গেলাম ঐ নামাজ কালাম চালু হওয়া ছেলে গুলোর বাসায় ।
এরা অবশ্য বুঝতে পারেনি আমি আর ঐ ভুতুড়ে বাসায় একা একা দিনের পর দিন থাকব না । প্রোগ্রামিং এর ভাষায় যাকে বলে মডিউলার এপ্রোচ ,আমি সব মাল সামানা ওখান থেকে
ধীরে ধীরে
এখানে নিয়ে এসে আবার ডাম্প করলাম ।
ব্যপার বুঝে এরা হা হা করে উঠল । ঐ মোতোয়াল্লি টাইপ দাঁড়িওয়ালা ভাই এর সব দোষ , ওনি ভাল কোথাও জায়গা এরেঞ্জ করে দিতে পারলেন না ।
কয়েক সপ্তাহ এখানে টেনেটুনে কাটিয়ে দিয়ে চলে গেলাম আরেক জায়গায় ।
সেখানেও সুবিধা লাগছিল না ,তাই চলে গেলাম অন ক্যাম্পাস ডরমেটরীতে । এখানে আসার পর মনে হল একটু বেশি খরুচে হলেও ছাত্রদের জন্য থাকার জায়গা হিসেবে মন্দ না ।